কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মহাসড়ক উপচে পাহাড়ি ঢল নেমে চকরিয়া পৌরশহরের অন্তত দুই হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার অন্তত দুই শতাধিক গ্রাম ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত চার লাখ মানুষ। চকরিয়া উপজেলার অভ্যন্তরিন চারটি সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ এসব সড়ক পার হচ্ছে নৌকা নিয়ে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, চকরিয়া পৌরশহরের বাটাখালী, ভরামুহুরী, ফুলতলা, নামার চিরিংগা, হালকাকারা গত সোমবার রাত থেকে ডুবে আছে। এসব এলাকার বসতঘরে বুক সমান পানি। এছাড়া চকরিয়া থানাও অন্তত চার ফুট উচ্চতার পানি রয়েছে। পৌরসভার অন্য এলাকাগুলোতে কোমর সমান পানি রয়েছে। চকরিয়া থানা রাস্তার মাথা-বাটাখালী-বদরখালী সড়ক, চকরিয়া পৌরশহরের জনতা মার্কেট-বিএমচর-কোনাখালী সড়ক, জিদ্দাবাজার-কাকারা-মানিকপুর সড়ক, বানিয়ারছড়া-পহরচাঁদা সড়ক ডুবে গেছে। এসব সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে নৌকা নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। চকরিয়া পৌরসভা, উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, হারবাং, বরইতলী, কোনাখালী, বিএমচর পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হচ্ছে না মানুষের। গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যার্তরা।
চকরিয়া ওয়েস্টার্ন প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজিজুল হক বলেন, চকরিয়া পৌরশহরের অন্তত দুই হাজারের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের অন্তত একশো কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আজিজুল হক বলেন, গভীর রাতে মহাসড়ক উপচে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢোকায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ী মালামাল সরাতে পারেননি।
চকরিয়া পৌরসভার ভরামুহুরী এলাকার ব্যবসায়ী মো. রাসেল (৩০) বলেন, আমার জীবনে এতো পানি দেখিনি। বসতঘরের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। দোকানের কোনো মালামাল সরাতে পারিনি।
বিএমচরের বাসিন্দা জুবাইরুল ইসলাম বলেন, বন্যার পূর্বে জলকপাট খুলে না দেওয়ায় পাহাড়ি ঢলের পানি বের হতে না পেরে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখন জলকপাট খুলে দিলেও পানি বেড়েই চলেছে। কোনাখালীর কইন্যারকুমের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে চার ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন জানায়, চকরিয়া উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতারা বন্যার্তদের খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াচ্ছেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, বন্যার্ত বেশিরভাগ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যতটুকু সম্ভব শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। চকরিয়ার সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। উজানে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বন্যার পানি বাড়ছে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, সোমবার রাত থেকে বন্যার পানি বাড়তে শুরু করে। নতুন এলাকা ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে এই পানি আরও বাড়তে পারে। বেড়িবাঁধের যেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।