👤 নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া
কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় এবারের বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ত্রাণের কথা শুনলেই ছুটে যাচ্ছেন। পানিবন্দী মানুষ কোনো নৌকা বা গাড়ি দেখলেই কাছে যাচ্ছেন, ত্রাণ চাইছেন। বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাঘগুজারা এলাকায় দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ত্রাণ বিতরণ করছেন। ত্রাণের প্রতি প্যাকেটে চিড়া-মুড়ি, চিনি, তেল, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। সড়কের ওপর গাড়ি দেখেই বন্যার পানি মাড়িয়ে নারী-পুরুষ, শিশুরা ছুটে আসেন। সেখানে চারশত ত্রাণের প্যাকেট দেয়ার পর আবার নৌকা নিয়ে বসতঘরে পানিবন্দী হয়ে পড়া লোকজনের কাছে ছুটে যান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কারও ঘরে রান্নার পরিবেশ নেই। খাবারের জন্য ঘরে কিছু নেই। এজন্য ত্রাণ দেখলে ছুটে আসছে মানুষ। এমন মানুষও দেখেছি যাঁরা বিভিন্ন সময় এলাকার মানুষকে সহযোগিতা করতেন, তাঁরাও ত্রাণ নিতে এসেছেন। সরকারি-বেসরকারিভাবে আরও বড় পরিসরে মানুষের পাশে থাকতে অনুরোধ করেন তিনি।
বলিরপাড়া বৃদ্ধ আশরাফ আলী বলেন, 'তিন দিন ধরে বন্যার পানিতে ভাসছি। ত্রাণ তো কেউ দেয়নি, দেখতে পর্যন্ত আসেননি।'
সাঁকোর পাড় স্টেশনে ব্রিজের ওপর অবস্থান নেওয়া নুরনাহার বেগম বলেন, 'উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়া কেউ একমুঠো খাবারও দেননি। খবরও নেননি। সকালে উপোস ছিলাম। বিকেল চারটার দিকে একমুঠো রান্না করা খাবার খেয়েছি।'
চকরিয়া পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী ছিলেন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম খিচুড়ি রান্না করে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। পাশাপাশি ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবারও দিয়েছেন। কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বলেন, ৩ হাজারের বেশি মানুষ বন্যাকবলিত হলেও এক-দুই বেলা খিচুড়ি দিতে পেরেছি মাত্র দেড় হাজার মানুষকে। বন্যাকবলিত সব মানুষকে ব্যক্তিপর্যায়ে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাহাবউদ্দিন, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক, ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম, পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আজমগীর, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নুর আয়েশা খান ফাউন্ডেশন ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
বন্যা কবলিত কয়েকজন বলেন, সবকিছুর মূল্য উর্ধ্বগতি। মানুষের কাজের বাজারও সীমিত। এমনিতে শ্রমজীবী মানুষের পকেটে টাকা নেই। বন্যার আগে সপ্তাহখানের বৃষ্টি থাকায় কাজকর্ম ছিল না। সবমিলিয়ে এই বন্যা মানুষের দূর্ভোগ বাড়িয়েছে। এ কারনে ত্রাণের খবর শুনলে মানুষ পেছনে ছুঁটছেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা জেলা প্রশাসন চকরিয়ার জন্য ২০ মেট্রিক টন ও পেকুয়ার জন্য ১৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় অন্তত চার লাখ মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছেন। এতো মানুষের জন্য ৩৫ মেট্রিক টন চাল সরকারি বরাদ্দ খুব কম হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চকরিয়া ও পেকুয়ার অন্তত চারটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বসতঘর থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। কিছু কিছু বসতঘরের উঠানে ছয় ইঞ্চি থেকে একফুট সমান পানি রয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষত চিহ্ন ভেসে উঠছে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, মানুষের ঘরে হাহাকার বিরাজ করছে। মানুষ ত্রাণ চাইছে। আমরা পর্যাপ্ত ত্রাণ দিতে পারছি না। চকরিয়া-পেকুয়ায় মানুষ খুব ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানে সরকারের নজর বাড়ানো দরকার।