Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা/ চকরিয়ায় যুবলীগ নেতার অস্ত্র হাতে গুলি করার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল

মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদÐ পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের চকরিয়ায় গুলির ঘটনায় অস্ত্র হাতে এক যুবলীগ নেতার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গত মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় ফোরকানুর রহমান (৫০) নামের জামায়াতের এক কর্মী নিহতের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, পুলিশ কোনো গুলি ছুঁড়েনি।

ওসির বক্তব্য ঘিরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল তাহলে জামায়াত কর্মী মো. ফোরকানুর রহমান কাদের গুলিতে মারা গেছেন। ‘সমুদ্র সংবাদ’ এর কাছে সংঘর্ষের ঘটনার তিনটি ছবি আসে। ওই তিনটি ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্র ও লাটিসোঁটা হাতে দৌঁড়াচ্ছেন। প্রথম সারিতে অস্ত্র হাতে চকরিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন, পাশে আছেন তাঁর ভাই প্রবাসী মিরাজ উদ্দিন। তাঁদের পেছনে আরও ১০-১২জন আছেন। এদের একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি হলেন চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর। এই তিনটি ছবি ছাড়াও ৩৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে চকরিয়া পৌরশহরের মহাসড়ক দিয়ে পুরোনো বাসস্ট্যাণ্ড থেকে বায়তুশ শরফ সড়কের দিকে যাচ্ছেন। ওই সময় বেলাল উদ্দিনকে এক রাউন্ড গুলি করতে দেখা গেছে। মিছিলে আরও ৬০-৭০ জন ব্যক্তি ছিলেন।

জানতে চাইলে চকরিয়া পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সোহেল বলেন, আমাদের পৌরসভার আওয়াতাধীন ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন। একটি ছবি বুধবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে অস্ত্র হাতে ব্যক্তিটির শারিরীক অবয়ব বেলালের মতো। আমি চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন থাকায় বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারিনি। তবে যুবলীগ কোনো অস্ত্রবাজিকে প্রশ্রয় দেয় না। এরকম প্রমাণ হলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চকরিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীরের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আব্দুল্লাহ আল ফারুকের দাবি, চকরিয়ায় গায়েবানা জানাজা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্পন্ন হয়। যেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে চকরিয়া পৌরসভায় বায়তুশ শরফ রোডের মাথায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন প্রকাশ্যে গুলি করে। এতে জামায়াতকর্মী ফোরকান নিহত হন। আহত হন অনেকেই। এসময় অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। গুলি বর্ষণকারীরা অনেকটা চিহ্নিত বলে দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়তে উপজেলা প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। এজন্য চকরিয়ায় তিনবার গায়েবানা জানাজার স্থান বদল করা হয়। সর্বশেষ চকরিয়া পৌরসভার নামার চিরিংগা এলাকার মামা-ভাগিনার মাজার সংলগ্ন জায়গায় জানাজার নামাজ পড়ার সিদ্ধান্ত হয়। গায়েবানা জানাজা পড়তে বিকেল চারটার দিকে মানুষ মামা-ভাগিনার মাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। স্থান সংকুলানের কারনে সেখানে আগেই আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় অনেকে নতুন করে জানাজা পড়তে যাচ্ছিলেন। আবার অনেকে জানাজা পড়ে ফেরত আসছিলেন। ওই সময় বায়তুশ শরফ সড়ক দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢুকেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন দত্ত। ওই সড়ক দিয়ে তাঁদের যেতে দেখে জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষ উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ওসি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা করেন তাঁরা। পরে ২০-৩০জন হেলমেট ও মুখোশপরা ব্যক্তি ঘটনাস্থলে যান। ওইসময় হেলমেট ও মুখোশপরা ব্যক্তিরা গুলি ছুঁড়েন। এতে মারা যান জামায়াত কর্মী ফোরকানুর রহমান।

এদিকে জামায়াত কর্মী ফোরকানুর রহমান নিহত হওয়ার পর তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করেছে। এরপর লাশ বুধবার সকাল ১১টার দিকে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে চকরিয়া পৌরসভার আব্দুলবারী পাড়ায় জানাজা শেষে ফোরকানুরের লাশ দাফন করা হয়েছে।

ফোরকানুরের ভাইপো সাহাবউদ্দিন বলেন, ফোরকানুর রহমানের পরিবার কোনো মামলা করেননি। তবে তাঁর স্ত্রী নুরুচ্ছফার কাছ থেকে গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে ও থানায় পুলিশ একাধিক স্বাক্ষর নিয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদকে ফোন করা হলে তিনি এবিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

0Shares