টানা ভারী বর্ষণের ফলে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতেই ফের বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছে পেকুয়া সদরের জনগন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বসতঘরের মেঝে ছুঁই ছুঁই করছে পাহাড়ি ঢলের পানি।
রোববার বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা এলাকায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে ভোলা খাল হয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকছে। এতে ফসলী জমির বীজতলা ও আমনের খেত ডুবে গেছে। মানুষের উঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। কিছু কিছু বসতঘরের মেঝে ছুঁই ছুঁই করছে।
পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শাহেদুল ইসলাম বলেন, টানা ভারী বর্ষণের ফলে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে রোববার সকাল ১০টা থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে আমন খেতের বীজতলা ও রোপা খেত তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে রাতেই বসতঘরে পানি ঢুকবে। শাহেদুল ইসলাম আরও বলেন, বালুর বস্তা ও গাছ-বাঁশ দিয়ে ঢলের পানি আটকানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ঢলের ¯্রােত বেশি থাকায় চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
মেহেরনামার খাসপাড়ার বাসিন্দা জাকির হোসেন (৫৫) বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় পেকুয়া সদরের মানুষ দুশ্চিন্তায় আছে। সবার মনে ফের প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা বিরাজ করছে।
রোববার দুপুরের দিকে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন। পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পূর্ব মেহেরনামার বেড়িবাঁধের তিনটি ভাঙা অংশের মধ্যে ৮০ মিটারের অংশটিতে কাজ চলমান রয়েছে। সেখানে অন্তত দেড় শতাধিক গাছ পুঁতা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বালু তুলতে না পারায় টিউবব্যাগ ভরার সুযোগ হয়নি। বৃষ্টি কমলেই টিউবব্যাগ ফেলা হবে।
পেকুয়া উপজেলার ১৩৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন। বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, আগস্টের শুরুতে বন্যায় পেকুয়া সদরের মেহেরনামা এলাকায় তিনটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। বর্তমানে ওই এলাকার তিনটি স্থানে ২১০ মিটার, ৪০ মিটার ও ৮০ মিটার করে বেড়িবাঁধ ভাঙা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সেসব স্থানে কাজ চলমান রয়েছে। পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে টিউব ব্যাগে বালু ভরতে না পারায় ভাঙা অংশ দিয়ে রোববার সকাল থেকে আবারও ঢলের পানি ঢুকছে।
পেকুয়া সদরের বেড়িবাঁধ ছাড়াও টৈটং ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি ছড়ার পার উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। রোববার দুপুর থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন বলেন, গত বন্যায় রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ছড়ার পানি সহজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে মানুষের বসত-বাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। বিস্তির্ণ আমন খেত তলিয়ে গেছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, আমি যখন দুপুরে বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে যাই, তখনই চুড়ান্তভাবে বেড়িবাঁধে যা মাটি ফেলা হয়েছে সবই তলিয়ে গেছে। এখন ঢলের কারণে সেখানে কাজ করা সম্ভব নয়। কাল-পরশু বৃষ্টি না হলে তবে কয়েকদিনের মধ্যে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত করা সম্ভব।