Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

হিমছড়ি সৈকতে বড় জাহাজের ধাক্কায় তিমিটির মৃত্যু, ধারণা বিশষজ্ঞের

২০২১ সালের ১০ এপ্রিল কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতের বালুচরে পুঁতে রাখা তিমির সবগুলো হাড়ই উদ্ধারের দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে তিমিটি বড় জাহাজের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল বলে ধারণা তাঁদের। বালুচরে পুঁতে রাখার দুই বছর নয় মাস পর গত সোমবার থেকে তিমিটির হাড় উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় ওই কার্যক্রম শেষ করা হয়। আজ শুক্রবার থেকে হাড়গুলো জোড়া লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। এখন হাড়গুলো সংরক্ষন করা হবে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের পেচারদ্বীপের বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (বিওআরআই)।

বিজ্ঞানীদের তথ্য মতে, ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল হিমছড়ির সৈকতে অর্ধ-গলিত একটি মৃত ব্রাইডস প্রজাতির তিমি ভেসে আসে। গভীর বঙ্গোপসাগরে তিমিটির মৃত্যু হওয়ায় শরীরের বিভিন্ন অংশ পচে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। ওই দিনই তিমিটি ১০ ফুট মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হয়।

এবিষয়ে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজের ধাক্কায় তিমিটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ তিমিটি উদ্ধারের সময় শরীরের কোনো অংশে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও মুখ ও মাথা থেঁতলানো অবস্থায় পাওয়া যায়। আমাদের দেশে বা বিদেশে তিমির মৃতদেহের ফরেনসিক সক্ষমতা না থাকায় আমরা তিমিটির মৃত্যুর কারণ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে ৭৯ থেকে ৮৪ প্রজাতির তিমি রয়েছে। যার মধ্যে ব্রাইডস তিমির প্রজাতি সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪টি পাওয়া যায়। যারা ইন্দো-পেসিফিক সমুদ্র অঞ্চলে বিচরণ করে। তাই এটি নিয়ে আরো গবেষনা প্রয়োজন। এই কারনে এর হাড়গুলো সংরক্ষন করা হচ্ছে।
বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা জাকারিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুতে রাখা তিমিটির ২৫০ এর বেশী হাড় উদ্ধার করা হয়েছে। এতে মনে করা হচ্ছে তিমিটির সবগুলো হাড়ই উদ্ধার সম্ভব হয়েছে। তবে বিভিন্ন প্রজাতির তিমিতে কতটি হাড় রয়েছে জানা সম্ভব হলেও এখনও পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে ব্রাইডস প্রজাতির তিমির হাড়ের সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি। এই কারণে আমরা শুক্রবার থেকে তিমিটির হাড় জোড়া লাগানোর কাজ শুরু করবো। কাজ শেষ হলে গণণায় বেরিয়ে আসবে ব্রাইডস প্রজাতির তিমির কতটি হাড় থাকে। আর এটি আমরা করতে পারলে ব্রাইডস প্রজাতির তিমি হাড় সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যাবে।

এদিকে হাড় উত্তোলন কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক তৌহিদা রশীদ। এসময় তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ, মো. জাকারিয়া ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হানিফ বিশ^াস।

লিখিত বক্তব্যে তৌহিদা রশিদ বলেন, ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল উদ্ধার হওয়া তিমিটির ওজন ছিল প্রায় ৯ মেট্রিক টন, দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। সেদিন তিমিটি সৈকতের বালুচরে ১০ ফুট গর্ত খুঁড়ে পুঁতে রাখা হয়েছিল। গত সোমবার যখন আমরা হাড় উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করি, তখন তিমিটির হাড়ের সন্ধান পাওয়া যায় ২০ফুট নিচ থেকে। সর্বশেষ হাড় তুলতে আমাদের ২৫ ফুট পর্যন্ত গর্ত খুঁড়তে হয়েছে। হাড়ের সন্ধানে গিয়ে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বালুচরের ১০ ফুট খোড়ার পর গর্তে পানি জমে যায়। পরে সেচপাম্প লাগিয়ে পানি সেচ করে ও স্কেভেটর লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ চলমান রাখেন। একপর্যায়ে ২০ফুট গভীরে হাড় খুঁজে পাওয়া যায়।

তৌহিদা রশীদ বলেন, তিমিটির হাড় উত্তোলনের পর সেগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও রিএসেম্বলিং করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কারিগরি টিম গঠন করা হয়েছে। তিমির হাড়গুলো জোড়া লাগিয়ে কংকালটি প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও রিএসেম্বলিং করে গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিমি বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণার জন্য কংকালটি বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে বিওআরআই এর আওতায় মেরিন অ্যাকুরিয়াম স্থাপন কার্যক্রম শুরু হলে কংকালটি সেখানে হস্তান্তর করা হবে। আমরা আশা প্রকাশ করছি, সমুদ্রকে জানতে ও বুঝতে এটি মানুষের মধ্যে আগ্রহের সঞ্চার করবে এবং পাশাপাশি সমুদ্রের জীব বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে এই কার্যক্রমটি শুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

0Shares