বৈরি পরিবেশে ও উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে শত কিলোমিটার দূর থেকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার সাত শতাধিক শিক্ষার্থী এসেছে কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি স্কুল অ্যাণ্ড কলেজ প্রাঙ্গণের জিপিএ ৫ উৎসবে। তাদের পদচারণে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। ২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যেন প্রাণের উচ্ছ্বাসের কোনো ঘাটতি ছিল না।
২৫জুন সকাল ১০টায় বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের মূল আয়োজন। এর আগে থেকেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করে কৃতী শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশ পথের দুটি বুথ থেকে সংবর্ধনার নিবন্ধনের কার্ড নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা নাশতা ও ক্রেস্ট বুঝে নিয়ে উৎসব প্রাঙনে হাজির হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কক্সবাজারের আঞ্চলিক প্রধান আব্দুল কুদ্দুস রানা। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কক্সবাজার জেলা বন্ধুসভার সভাপতি উম্মে সাদিয়া হোসেন সিকদার।
গত তিন দশকে ১৩০জন মেয়ের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে তাঁদের পড়াশোনার উচ্চ শিক্ষার সুযোগ, পাঁচ শতাধিক নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণ ও ৩৫০জনকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়েছেন শামীম আক্তার। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, অনেক বাধা পেয়েছি। শত কটুক্তি শুনেছি। নানা হয়রানির শিকার হয়েছি। কিন্তু আমি থামবো না।
১০বছর বয়সী মেয়ে মনীষা পাল কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত ২৬টি গোল্ড মেডেল পেয়েছে। এরমধ্যে ৬টি আন্তর্জাতিক। সে পড়ছে কক্সবাজার সেন্ট্রাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণিতে। তাঁর বড় বোন সায়ন্তী পালও কারাতে পারদর্শী। অনুষ্ঠানে দুজনের কারাতে দেখে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। লেখাপড়ার পাশাপাশি দুই মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করায় তাদের বাবা উদয় শংকর পালকে সংবর্ধিত করা হয়।
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে চলে গান, নৃত্য, স্মৃতিচারণ। অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখে কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের রাখাইন সম্প্রদায়ের ছয়জন ছাত্রী। তাঁরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নৃত্য পরিবেশন করে জানান দেয় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা। বাংলার চির সবুজ প্রকৃতি ও রূপ লাবণ্যের প্রকৃতি ফুটিয়ে তুলে বায়তুশ জব্বারিয়া একাডেমি স্কুল অ্যাণ্ড কলেজের পাঁচজন ছাত্রী।
৪১বছর ধরে শিক্ষকতা করে অবসরে যাওয়া পেকুয়ার শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমদ। তিনি এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। তাকে সংবর্ধিত করা হয়। তাকে ক্রেস্ট ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে মানুষকে গড়ে তুলতে হবে। ছেলেদের জাগতে হবে, মেয়েদের জাগতে হবে। আমাদের চারপাশের যা কিছু আনন্দের, যা কিছু উপভোগ করার, সবই করবো। আমরা বিজ্ঞান ক্লাব করবো, আমরা বক্তৃতা করবো, আমরা নাচবো, আমরা গাইবো, আমরা খেলব-সবকিছু করবো। কিন্তু আমার জিপিএ ৫ যেন ছুটে না যায়। এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পেতে হবে। তবে সেটা খুব কঠিন। মেট্রিকের চাইতে ইন্টারমিডিয়েট খুবই কঠিন। দ্রুত শেষ হয়ে যায়, তাল রাখা যায় না এবং বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ে খারাপ করে। তোমরা খারাপ করবে না। কারণ তোমরা পড়াশোনা করবে। সফল হওয়ার একটাই উপায়-পরিশ্রম। বলা হয়, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। তোমরা যদি ভালো শিক্ষার্থী হও, তাহলে তোমাদের অবশ্যই শিল্পের চর্চা করতে হবে, সংগীত চর্চা করতে হবে, সাহিত্যের চর্চা করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, মানুষ হতে হলে বই পড়তে হবে। জানতে হলে কিশোর আলো, বিজ্ঞান চিন্তা পড়তে হবে। শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের মাদককে না বলার শপথ করান।
কক্সবাজার জেলা সেরা দশজন শিক্ষককে ক্রেস্ট ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন কক্সবাজারের প্রবীণ শিক্ষক, বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক এম এম সিরাজুল ইসলাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিজ্ঞান ভিত্তিক ও কারিগরি শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেন।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ সোলায়মান, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব ও উত্তরণ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. সৈয়দ করিম, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপম দাশ, কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয় জেলার সর্বোচ্চ দ্বিতীয় নম্বরপ্রাপ্ত জিপিএ ৫ কৃতী শিক্ষার্থী ও কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারা আকতার খান, অদম্য মেধাবী ও উখিয়া কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একমাত্র জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী হুমায়রা সোলতানা।
সবশেষে অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ডি-রকস্টার শুভ।
স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয় জিপিএ-৫ উৎসব।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।
দিনব্যাপী সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে ক্রেস্ট, ডিজিটাল সার্টিফিকেট, শিখোর পক্ষ থেকে বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস, সানকুইকের ফ্রুট জুস, প্রথম আলো ই-পেপার (৩ মাস) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, প্রথমা ডটকমে অনলাইনে বই অর্ডারে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয়কেন্দ্রে প্রথমা প্রকাশনের ও প্র প্রকাশনের প্রকাশিত বইয়ে ৩০ শতাংশ ছাড়, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তার ৬ (ছয়) মাসের প্রিন্ট ভার্সনের সাবস্ক্রিপশনে বিশেষ ছাড়ে কোনো প্রকার চার্জ ছাড়া ডেলিভারি ও একটি আকর্ষণীয় চাবির রিং একদম ফ্রি।