সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিগত সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের লাল পাসপোর্ট বাতিল হচ্ছে। পাসপোর্ট অধিদপ্তর তাঁদের পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগ) আলী রেজা সিদ্দিকী আজ বুধবার রাতে বলেন, যেহেতু সংসদ নেই, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য (এমপি) কেউ এখন পদে নেই, তাই তাঁদের পাসপোর্ট বাতিল হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
নতুন সরকার গঠনের পর মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা লাল পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সচিব, সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারাও এই পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ৮ আগস্ট শপথ নেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লাল পাসপোর্ট বাতিল হয়ে গেলে বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপি, যাঁদের নামে ফৌজদারি মামলা রয়েছে বা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের সাধারণ পাসপোর্ট পেতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আদালতের আদেশ পেলে তাঁরা সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, লাল পাসপোর্ট সাধারণত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা পেয়ে থাকেন। এর পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের কর্মকর্তা ও সরকারি বিশ্ববিদ্যায়ের উপাচার্যরাও লাল পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন। এ মুহূর্তে কতসংখ্যক লাল পাসপোর্ট রয়েছে, তা বলতে পারেননি সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আলী রেজা সিদ্দিকী। তবে তিনি জানান, যাঁরা এখন পদে নেই, শুধু তাঁদের লাল পাসপোর্টই বাতিল হবে। আর যাঁরা পদে আছেন, তাঁদের লাল পাসপোর্ট থাকছে। সে ক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যেহেতু পদে নেই, তাই তাঁর লাল পাসপোর্টও বাতিল হবে।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে যান। তখন থেকে তিনি দেশটিতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনা কোন মর্যাদায় ভারতে আছেন, সে বিষয়ে দেশটির সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে গতকাল বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার যে পাসপোর্ট রয়েছে, সেটির সুবাদে তিনি অন্তত দেড় মাস কোনো ভিসা ছাড়া ভারতে অবস্থান করতে পারেন।
২০১৮ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘সংশোধিত ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ নামে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। তাতে উল্লেখ আছে, উভয় দেশের ডিপ্লোমেটিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ৪৫ দিনের মেয়াদে ভিসা ছাড়াই বসবাসের জন্য (ভিসা ফ্রি রেজিম) থাকতে দিতে দুই দেশ পারস্পরিকভাবে রাজি হয়েছে।
এই সমঝোতা স্মারকের কথা উল্লেখ করে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই পাসপোর্টের সুবাদে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিসা ছাড়া ভারতে অবস্থান করছেন। তিনি দেশ ছেড়েছেন ১৭ দিন আগে। আরও ২৮ দিন তিনি ভিসা ছাড়া সেখানে অবস্থান করতে পারবেন। তবে এ সময়ের আগে যদি তাঁর লাল পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যায়, তাহলে তাঁকে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। একই সঙ্গে ভারতকেও এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে।