পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে ‘আয়নাঘরের প্রধান খলনায়ক’ আখ্যা দিয়েছেন গুমের শিকার হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আয়নাঘরের প্রধান খলনায়ক ছিল বেনজীর ও জিয়াউল আহসান। একজন চাকরিচ্যুত হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে। জিয়াউল আহসানকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। যারা ফ্যাসিবাদকে রক্ষা করার জন্য, হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য যারা কাজ করেছিল, তারা এখনো রাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় আসীন রয়েছে। আমি বলতে চাই, সরিষার মধ্যে ভূত রেখে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো কিছু অর্জন করতে পারবে না।’
আজ শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবসের সংহতি সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির আয়োজনে এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনভাবে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক, যেন আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যত গুম-খুন, অপহরণ হয়েছে, সেই সবের তথ্য দিতে বাধ্য হয়।’
বেনজীরকে ‘গুম-খুনের মহাখলনায়ক’ আখ্যা দিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘হাসিনার শাসনকে টিকিয়ে রাখার জন্য বেনজীরের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। সে এখন কোথায়, তার তথ্য প্রকাশ করতে হবে। তিনি যেখানেই আছেন, পৃথিবীর যে কোনাতেই আছেন, সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এসে বিচার করতে হবে।’
‘ডিবি হারুন কোথায়, মনিরুল কোথায়?’—এমন প্রশ্ন ছুড়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তাদের জনতার সামনে উপস্থিত করতে হবে, গ্রেপ্তার করতে হবে, তদন্ত করতে হবে, জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আমি মনে করি, এই গুম-খুনের রাজত্ব যিনি কায়েম করেছিলেন, গুম-খুনের রাজত্বের সবচেয়ে দায়ী ব্যক্তি হচ্ছেন শেখ হাসিনা। নাম্বার ওয়ান থেকে শুরু করতে হবে।’
এ সময় শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দিতে ভারতের কাছে আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যত গুম-খুন হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, যত অপকর্ম হয়েছে, সবকিছুর জন্য দায়ী করে তাঁর (শেখ হাসিনা) বিচার করা হবে। যদি কোনো কারণে ফেরত না আনতে পারি, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাঁর বিচার করা হবে।’ এ বিষয়ে তদন্তের জন্য জাতিসংঘেরও সহযোগিতা চান সালাহউদ্দিন।
নিজের গুম হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত আনুমানিক ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা। উত্তরার একটি বাড়িতে আমি অবস্থান করছিলাম। সাদাপোশাকের সশস্ত্র কিছু লোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে আমাকে চোখ বেঁধে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারা ২০-২৫ মিনিট পর আমাকে একটি জায়গায় নিয়ে গোপন কুঠরিতে আবদ্ধ করে যার আয়তন ১০ ফুট বাই ৫ ফুট। সেই কক্ষে একটা ছিদ্র ছিল আর একটি পানির ট্যাপ ছিল। একটা পাতলা কম্বল আর একটা পাতলা বালিশ। ওপরে উচ্চ ভোল্টেজের লাইট, সামনে স্টিলের দরজা, নিচে একটু ফাঁকা খানাপিনা দেওয়ার জন্য। দরজার ওপরে আরেকটু ফাঁকা ছিল বাতাস প্রবাহের জন্য। বাইরে একটা ফ্যান সার্বক্ষণিক চালু রাখত যাতে ভেতরে বাতাস ঢোকে।’