বগুড়ায় সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজান (৩৭) ও প্রতিপক্ষের যুবদল কর্মী সানোয়ার হোসেন লেদো (৪০) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকার থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত এ জোড়াখুনের ঘটনায় মামলা হয়নি।
আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব বিরোধের জের ধরে সোমবার রাতে সদর উপজেলার গোকুল বাজার এলাকায় মিজানকে কুপিয়ে এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে লেদোকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসীরা জানান, নিহত মিজানুর রহমান মিজান বগুড়া সদরের গোকুল উত্তরপাড়ার আফসার আলী সাকিদারের ছেলে। তিনি অস্ত্রসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি ছিলেন। গত ২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে গোকুল বাজার এলাকায় মিজানের সহযোগী স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক সনি সরকারকে হত্যা করা হয়।
এ মামলায় গোকুল উত্তরপাড়ার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি সুমন আহম্মেদ বিপুল ১নং এবং একই এলাকার বুলু মিয়ার ছেলে যুবদল কর্মী সানোয়ার হোসেন লেদো ৩নং আসামি হন। এছাড়া প্রায় ৬ মাস আগে মিজান গ্রুপের লোকজন গোকুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফাইনুর ইসলামের বাবা আবদুল মান্নানের পা কেটে নেন। এরপর থেকে তাদের সঙ্গে মিজানের বিরোধ চলে আসছে।
সোমবার রাত ৯টার দিকে লোডশেডিং চলাকালে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মিজানুর রহমান মিজান গোকুল এলাকায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সবুজের ভাড়া দেওয়া অফিসে বসেছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ৮-১০ জনের একদল দুর্বৃত্ত অফিসে ঢুকে মিজানকে কুপিয়ে চলে যায়। রক্তাক্ত মিজানকে উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় মিজানপক্ষের লোকজন হত্যায় জড়িত থাকায় লেদোকে আটকে রেখে মারপিট ও কুপিয়ে আহত করেন। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে একই হাসপাতালে পাঠায়। মিজান পক্ষের লোকজন পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে জরুরি বিভাগে ঢুকে ভাঙচুর ও আবারো মারপিট করলে রাত ১১টার দিকে লেদো মারা যান।
নিহত মিজানের স্বজনরা অভিযোগ করেন, গোকুল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য ফাইনুর ইসলাম, সাবেক যুবদল নেতা বিপুল, লেদো ও তাদের সঙ্গীরা মিজানকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। লেদোর স্বজনরা অভিযোগ করেন, মিজানের লোকজন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুরের পর চিকিৎসারত লেদোকে পিটিয়ে হত্যা করে। খবর পেয়ে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যান।
সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ ও ছিলিমপুর মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিলাদুন্নবী জানান, মিজান ও লেদোর মরদেহ উদ্ধার করে ওই শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে দুজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জানাজা শেষে নিজ নিজ এলাকার কবরস্থানে মরদেহ দুটি দাফন করা হয়েছে। জোড়া হত্যার ঘটনায় গোকুল উত্তরপাড়া এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) ফইম উদ্দিন জানান, দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত মামলা হয়নি। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আবু হাসান বলেন, মিজানকে হত্যার পেছনে কী কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যুবদলের সাবেক নেতা বিপুলকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।