কক্সবাজারের চকরিয়া সহকারী জজ আদালত সংলগ্ন দুই শতক ৩৩ পয়েন্টের একখন্ড জায়গায় ঘেরা-বেড়া দেয়াকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে আদালত ও উপজেলা প্রশাসন। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দুইপক্ষের মধ্যে থেমে থেমে বাকবিতণ্ডা ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের আইনজীবী ও তাঁদের সহকারীরা চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাকে প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ারও ঘোষণা দেন আইনজীবীরা।
চকরিয়া আদালত সূত্র জানায়, চকরিয়া উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির ৬ নম্বর খতিয়ানের ৪৯৩ নম্বর বিএস দাগে ৮৮ শতক জমি রয়েছে। এই জমির ৫৬শতকে বর্তমান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও সহকারী জজ আদালতের অবস্থান। সহকারী জজ আদালতের বিচারকের এজলাস ঘেঁষে দুই শতক ৩৩ পয়েন্টের একখন্ড খালী জায়গা রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে চকরিয়া সহকারী জজ আদালত সেখানে ঘেরা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরই ফাঁকে আজ বুধবার সকালে উপজেলা প্রশাসন সেখানে খুঁটি পুঁতলে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও আইনজীবীরা বাধা দেন। এসময় পক্ষে-বিপক্ষে ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় কে এম নাছির উদ্দিন নামের একজন সাংবাদিককে লাঞ্চিত করেন কিছু দুর্বৃত্ত। ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করায় তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়।
চকরিয়া অ্যাডভোকেট’স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিফতাহ্ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সহকারী জজের এজলাস সংলগ্ন দুই শতক ৩৩পয়েন্টের জায়গাটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তালবাহনা করছেন ইউএনও। জায়গাটি এজলাসের নিরাপত্তার স্বার্থে আদালত কর্তৃপক্ষ ঘেরা দিতে চাইলে উদ্ভট সব প্রকল্প নিয়ে হাজির হন তিনি। এই জায়গায় প্রথমে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল করার চেষ্টা করা হয়। সরকার পতনের পর সেটিকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করার চেষ্টার পর আজ বুধবার চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের ছোট ছোট বাচ্চাদের দিয়ে ‘স্কাউট ভবন চাই’ বলে স্লোগান দেওয়ানো হয়। পরে আইনজীবী ও সহকারীরা জায়গাটিতে টিনের ঘেরা দেয়ার কাজ সম্পন্ন করেন।
ঘটনার বিষয়ে চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাদার পরেশ কান্তি সাংবাদিকদের কাছে একটি লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কতিপয় ব্যক্তি আদালত সংলগ্ন আদালতের জমি দখল করতে ইট, বালু জড়ো করেন এবং আদালত ঘেঁষে খুঁটি পোঁতা শুরু করেন। তখন আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনজীবী সমিতির সদস্যরা আদালতের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজে বাধা দেন। পরে অরক্ষিত জায়গায় ঘেরা-বেড়া দিয়ে বেদখলের হাত থেকে জমিটি রক্ষা করেন।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জায়গাটির বিএস রেকর্ডীয় মালিক চকরিয়া উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি। তাঁরা কোনো বাধা দিচ্ছেন না। এবিষয়ে তাঁদের কোনো বক্তব্য নেই। অহেতুক ইউএনও বিষয়টি ঘোলাটে করেছেন।
চকরিয়া অ্যাডভোকেট’স এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, ইউএনও’র অপেশাদারসূলভ আচরণের কারণে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে তাকে প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়েছে। আমরা এই ইউএনওকে চকরিয়ায় আর দেখতে চাই না।
তবে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ১২ একর ২৫ শতক জায়গা উপজেলা পরিষদের নামে ও এক একর ৫১ শতক জায়গা চকরিয়া উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির নামে। চকরিয়া আদালত ভবন চকরিয়া উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির জায়গায়। কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি উপজেলা পরিষদের আওতাধীন। ওরা (আদালত কর্তৃপক্ষ) হঠাৎ করে সমবায় সমিতির জায়গা দখল করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। এতে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পরে জায়গাটি দখল করে জোর করে তাঁরা ঘেরা-বেড়া দিয়ে দেন।