Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু, আসামি দুই চিকিৎসক, পরিচালক ও নার্স

কক্সবাজারের পেকুয়া ফোরকান হাসপাতালে এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক, এক পরিচালক ও এক নার্সের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কক্সবাজারকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন ফোরকান হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক উম্মে হাবিবা,পরিচালক মোহাম্মদ ফোরকান, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. গালিব ও নার্স রিনা রানী সুশীল।

মামলার বাদি গিয়াস উদ্দিন পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেখেরকিল্লাহ ঘোনা এলাকার শাহাব উদ্দিনের ছেলে।

মামলার কাগজ ঘেঁটে দেখা যায়, প্রসব বেদনা উঠলে গত ১০ সেপ্টেম্বর গিয়াস উদ্দিন তাঁর স্ত্রী জোসনা আকতারকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক জোসনাকে আলট্রাসনোগ্রাফি ও চেকআপ করতে পরামর্শ দেন। পরে জোসনাকে পেকুয়া বাজারের ফোরকান হাসপাতালে নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফি ও চেকআপ করান। তখন চিকিৎসক উম্মে হাবিবা ও চিকিৎসক মো. গালিব সন্তানের পজিশন ঠিক রয়েছে বলে জোসনার স্বামীকে জানান। এসময় এই দুই চিকিৎসক বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলা করবে এবং সেটি প্রসূতির জন্য ভালো হবে না। ফোরকান হাসপাতালে মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকায় যত্নসহকারে বাচ্চা প্রসব করানো হবে এবং সেটি তাঁদের (চিকিৎসকদের) ওপর বিশ্বাস রাখতে বলেন।

মামলার আবেদনে আরও বলা হয়, চিকিৎসক উম্মে হাবিবা ও মোহাম্মদ গালিবের পরামর্শে জোসনা আকতারকে ফোরকান হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন রাত ৯টার দিকে প্রসূতিকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে গিয়ে বাচ্চা প্রসব করানো হয়। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীর অবস্থা ভালো না। বাচ্চা মারা গেছে। এরপর প্রসূতিকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক জানিয়েছেন, ভুল চিকিৎসার কারনে বাচ্চা মারা গেছে এবং প্রসূতির গোপনাঙ্গে ১৫টি সেলাই করানো হয়েছে। পরে ফোরকান হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ ফোরকান চট্টগ্রামের ওই হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এসময় সহযোগিতা নিতে অপারগতা জানালে এবং সুস্থ বাচ্চা মেরে ফেলার কথা বললে ফোরকান প্রসূতির স্বামী গিয়াসউদ্দিনকে মারধর করেন। এবিষয়ে উচ্চবাচ্য করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেন।

গিয়াস উদ্দিন বলেন, পুরোপুরি ভুল চিকিৎসায় আমার বাচ্চাটি মেরে ফেলা হয়েছে। আমার স্ত্রী এখনও হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। আমি আমার বাচ্চাকে হত্যার বিচার চাই। গিয়াস উদ্দিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার সংসারে তিনটি কন্যাশিশু। এবার আলট্রাসনোগ্রাফি করে জানতে পারি ‘ছেলে’ বাচ্চা হচ্ছে। এজন্য পরিবারের সবার মধ্যে খুশি ছিল। এই চিকিৎসকদের ভুলের কারনে আমার সব মাটি হয়ে গেছে।

পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি আমলে নিয়ে হাসপাতালের গাইনী কনসালটেন্টকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া ফোরকান হাসপাতালকে ক্লিনিক চালানোর স্বপক্ষে কি কি কাগজপত্র আছে সেটা হাজির করতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

মামলার খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ফোরকান হাসপাতালে মিট দ্যা প্রেসের আয়োজন করা হয়। এতে কথা বলেন হাসপাতালটির পরিচালক রুহুল আমিন। তিনি দাবি করেন, বাচ্চা মেরে ফেলার বিষয়টি গুজব। কিছু ষড়যন্ত্রকারী হাসপাতালটির পেছনে লেগেছেন।

26Shares