জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়নে আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করতে তিন উপদেষ্টাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা জানান, ‘অভিযোগ তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। তথ্য উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কমিটিতে থাকবেন। তারা অন্য কাউকে সঙ্গে নিতে পারবেন।’
ডিসি পদে পদায়নে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের তথ্য তুলে ধরে বৃহস্পতিবার দেশের দুটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে দু’জনের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনের স্ক্রিনশট যুক্ত করে বলা হয়, তাদের একজন জনপ্রশাসন সচিব ও অন্যজন যুগ্ম সচিব। সাম্প্রতিক ডিসি নিয়োগে ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের কথা বলা হয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ অভিযোগ আমি মূল্যহীন মনে করি। ইটস আ ফেক নিউজ।’
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার কথা জানিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘দেখুন, যে ক্লিপটা সোশ্যাল মিডিয়াতে বহুল প্রচারিত হয়ে গেল, সেটা কতখানি এআই প্রডিউসড আর কতখানি রিয়েল, কতখানি ফেক– এটা সাধারণ মানুষ বলতে পারে না। তাৎক্ষণিক যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা হলো- এর টেকনিক্যাল ইন্টিগ্রিটি কী, সেটা জানার জন্য কেবিনেটে কথা হয়েছে। প্রশাসনে অত্যন্ত দায়িত্বশীল জায়গায় অধিষ্ঠিত কর্মকর্তাদের কোনো রকমের দায়িত্বহীনতা মেনে নেওয়া যাবে না।’
প্রধান উপদেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনিই বলেছেন তদন্ত কমিটি করতে। উপদেষ্টাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা এটা দেখবেন। প্রধান উপদেষ্টা অবশ্যই কনসার্ন, কেন হবেন না! একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে কেন এমন কথা উঠল, এর উৎস কী– এটা তলিয়ে দেখতে হবে। আমরা তো আর অ্যানালগ যুগে নেই। তবে যেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে, লাফ দিয়ে ধরে নিতে পারছি না যে সেটাই সর্বশেষ সত্যি। আমাদের এটা যাচাই করতে হয়।’
মাঠপ্রশাসনে সম্প্রতি ব্যাপক রদবদল আনে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে দিনভর হট্টগোল করেন অনেক কর্মকর্তা। তারা নিজেদের ‘বঞ্চিত’ বলে দাবি করেন। নতুন দায়িত্ব পাওয়া জেলা প্রশাসকের মধ্যে আটজনকে পরদিনই প্রত্যাহার করে নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চারজনের কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়। আর এক উপসচিবকে করা হয় ওএসডি। সচিবালয়ে হট্টগোলের ওই ঘটনা তদন্তেও কমিটি হয়েছে।
এর মধ্যে এক যুগ্ম সচিবের কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি চেক ও ডিসি নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু চিরকুট উদ্ধারের খবর বের হয়। এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে ৩০ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘চেক উদ্ধারের খবরটি গুজব, সম্পূর্ণ ভুয়া এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ এর পর বৃহস্পবিার সচিব মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধেই ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘বিন্দু বিসর্গের সত্যতা নেই। এ প্রশ্ন করার আগে আপনারা নিজেকে প্রশ্ন করেন, আমাকে এ প্রশ্ন করা কতটুকু যৌক্তিক হচ্ছে। আমার মোবাইলটা হলো স্যামসাং, ওখানে যেটা শো করছে, সেটা হলো আইফোন। উনারা কী দেখাইল, সেটা উনাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন। আমি এইটা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। সরকার যে মোবাইল দিয়েছে, সেটাও আমি ব্যবহার করি না। আমার আগের যে নম্বর, সেটাই আমি ব্যবহার করতেছি। যদি স্টান্টবাজি নিউজ করতে চান, তাহলে এগুলো প্রশ্ন করতে পারেন।’
খবর যদি মিথ্যা হয়, তাহলে কী ব্যবস্থা নেবেন– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছি। পত্রিকাটির নাম উল্লেখ করে তথ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারি চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রেস কাউন্সিল আছে, অন্যান্য যে নিয়মকানুন আছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে ভুয়া লোককে কেন্দ্র করে এতকিছু, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১-২ দিনের মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। যে ব্যাংকারের ভুলের কারণে এ ধরনের একটা অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘যারা এটা করেছে, তাদের আমরা কতটুকু গুরুত্ব দেব? একটা রাস্তার লোক আমাকে অনেক কিছু বলতে পারে, আমি কি রাস্তার লোকের পেছনে দৌড়াব? আমরা সরকারের পজিশনে থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করি। যেভাবে আছি, সেভাবেই কাজ করব। যতদিন আল্লাহ হায়াতে রেখেছে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করব।’