Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশের সময় নারী ও শিশুসহ ৩৭ রোহিঙ্গা আটক

মিয়ানমার থেকে সাগরপথে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে ৩৭ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের হেফাজতে রাখা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা এলাকার সৈকত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন এসব রোহিঙ্গা। তাঁরা সবাই মিয়ানমারের মংডু শহরের সিকদারপাড়া, প্যারাংপুরো ও উকিলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, গতকাল রাতে টেকনাফের জাহাজপুরা সৈকত পয়েন্টে ট্রলার নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন এসব রোহিঙ্গা। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পেয়ে পারাপারে সহায়তাকারী দালালদের বাধা দিয়ে এসব রোহিঙ্গাকে আটক করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল গিয়ে তাঁদের আটক করে।

আটক রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২১ শিশু, ১২ নারী ও ৪ পুরুষ আছেন। তাঁদের কয়েকজন বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) তুমুল লড়াই চলছে। উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি, মর্টার শেল, ড্রোন ও মিসাইল হামলায় তাঁদের বসতঘর ও দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় বসতঘরগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই তাঁরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে নাফ নদীর তীরে এসে আশ্রয় নেন। পরে মিয়ানমারের দালালেরা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানোর আশ্বাস দেন। এদিকে বাংলাদেশের দালাল দলের সহায়তায় কক্সবাজারে অনুপ্রবেশ করেন তাঁরা।

ফাতেমা বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, বাংলাদেশে আসার জন্য আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদীর তীরে জড়ো হয়েছেন।

বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমজাত হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে এসব রোহিঙ্গাদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, বিজিবির কাছে তাঁদের হস্তান্তর করা হবে। পরে বিজিবির সদস্যরা তাঁদের নিজ দেশে (মিয়ানমারে) ফেরত পাঠাবেন।

টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবস্থাপনা কমিটির এক চেয়ারম্যান (মাঝি) বলেন, মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপে যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে নতুন আসা রোহিঙ্গারা তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন। এর মধ্যে টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকেছেন ২০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা। আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শিবিরে ঢুকতে না পেরে অন্যত্র পালিয়ে গেছেন।

নদ–নদী ও সাগরতীরবর্তী এলাকায় দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর দাবি জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। তাঁরা বলেন, এসব দালালকে চিহ্নিত করে এখনই আইনগত ব্যবস্থা না নিলে তাঁদের প্রতিরোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ ও নোয়াখালীর ভাসানচর ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। এর মধ্যে আরও রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই।

নির্বাহী প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক এসব রোহিঙ্গার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি শুনেছেন। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় রোহিঙ্গাদের আটক করে নাফ নদী দিয়ে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

0Shares