Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কুতুবদিয়ায় পূজা দেখতে মুসলিমদের ভিড়, চিড় ধরেনি সম্প্রীতির বন্ধনে

বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে অবস্থিত কক্সবাজারের কুতুবদিয়া দ্বীপ। উপজেলার ব্যস্ততম এলাকার বড়ঘোপ বাজার। বাজারের মধ্যভাগে সর্বজনীন কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরে মহাধুমধামে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমী। মণ্ডপে পূজা দেখতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পাশাপাশির স্থানীয় মুসলমান নারী-পুরুষও ভিড় জমিয়েছে।

কুতুবদিয়ার প্রতিটি মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে রীতিমতো গর্ব করেন। দ্বীপে স্মরণকালে কোনো সাম্প্রদায়িক হানাহানির ঘটনা ঘটেনি। পীরের দরগা, মসজিদ, মন্দির সবই রয়েছে এখানে।
২১৫ দশমিক ৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের নামকরণ হয়েছিল হজরত কুতুব উদ্দিনের নামে।

দ্বীপের আধ্যাত্মিক পুরুষ মালেক শাহ (র.)-এর দরবার শরীফে প্রতিবছর লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তেমনি ধুমধাম করে উদযাপিত হয় দুর্গাপূজাও।

২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দ্বীপের লোকসংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৮ জন। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশ মুসলিম, ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ হিন্দু এবং শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন।

৮৬ বছর আগে দ্বীপের বড়ঘোপ বাজারে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় সর্বজনীন কেন্দ্রীয় কালীমন্দির। এরপর প্রতিষ্ঠিত হয় বড়ঘোপ রাধাগোবিন্দ মন্দির, স্টিমারঘাট কালীমন্দিরসহ আরও কয়েকটি মন্দির। তবে পাকিস্তান আমলেও এখানকার মন্দিরে কোনো হামলা হয়নি। এ কারণে এখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেদের নিরাপদ ভাবেন সব সময়।
আজ বিকেলে বড়ঘোপ বাজারের সর্বজনীন কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরে গিয়ে দেখা গেল, সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষেরা দুর্গাপ্রতিমা দর্শন শেষে পূজা-অর্চনায় মশগুল।

মণ্ডপের বাইরে পাহারায় পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অন্তত উপজেলার ১২টি মণ্ডপ ঘুরে দেখেন উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ) শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ইমাম মাহাদী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরমানসহ স্থানীয় বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মী এবং ছাত্র প্রতিনিধিরা।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি জালাল আহমেদ বলেন, কুতুবদিয়ার ঐতিহ্য হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির একটা বন্ধন আছে। দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে দ্বীপের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করে আসছেন। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং তাদের সংস্কৃতির বিকাশে সরকার ও প্রশাসন খুবই আন্তরিক।
সন্ধ্যায় সর্বজনীন কালীমন্দিরে কথা হয় উপজেলা দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযুদ্ধ ভুলা নাথের (৭৮) সঙ্গে। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা উদযাপনে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
মন্দিরের পুরোহিত তাপস চক্রবর্তী (৩৬) বলেন, আট বছর ধরে তিনি এই মন্দিরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে টানা ২৬ বছর মন্দিরে

পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন তার বাবা রতন চক্রবর্তী (৫৬)। বাবার মৃত্যুর পর তিনি দায়িত্ব নেন। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের সময় বাধার সম্মুখীন হননি।

সাবেক পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাজীব সেন (৪৭) বলেন, এবার উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নের ৪৪টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩১টি ঘটপূজা, ১৩টি প্রতিমাপূজা। ১৩ অক্টোবর দুপুর ১২টার মধ্যে প্রতিমাগুলো বিভিন্ন পুকুর-দিঘি এবং কয়েকটি বড়ঘোপ সমুদ্রসৈকতে বিসর্জন দেওয়া হবে। মণ্ডপের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করছে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন ও যৌথবাহিনী।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহাদাত হোসেন বলেন, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। প্রতিটি মন্দিরে বিভিন্ন টিম গঠন করে যৌথবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জিয়াউর রহমান বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে উপজেলার ১০টি মণ্ডপে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৮৫০ কেজি করে চাল, বড়ঘোপ কেন্দ্রীয় কালীমন্দিরে ১২৫০ কেজি চাল এবং মায়ের বাড়ি কালিমন্দিরে ৩৭০ এবং ৩২টি ঘটপূজার প্রতিটিতে ৯০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কুতুবদিয়া থানার ওসি আরমান বলেন, কুতুবদিয়ায় অতীতে মন্দির কিংবা সনাতন ধর্মের লোকজনের ওপর হামলার নজির নেই। পুলিশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ নজরে থাকবে প্রতিটি মন্দির। পাশাপাশি যৌথবাহিনী সবসময় সহযোগিতা করছে। বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থিত দ্বীপটির মানুষ এখন পর্যন্ত সম্প্রীতির অটুট বন্ধন ধরে রাখতে পেরেছে, যা দেশের মানুষের কাছে দৃষ্টান্ত হতে পারে।

0Shares