👤 নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া
গতকাল শুক্রবার রাত ১০টায় মারা যান ছেলে আব্দুল হাকিম (২৯)। আজ সকাল ১০টায় তাঁর নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। লোকজন তাকে দাফন করে বাড়িতে গিয়ে শুনেন হাকিমের মা ছেনুয়ারা বেগমও (৪৯) মারা গেছেন।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের ছৈয়দনগর গ্রামে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, আব্দুল হাকিম গত এক বছর ধরে পিত্তথলির ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তিনি পেশায় গাড়ি চালক ছিলেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছেন। একই সময়ে মা ছেনুয়ারা বেগমেরও লিভারে ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনিও যথেষ্ট চিকিৎসা পাননি।
আব্দুল হাকিমের দুইটি বাচ্চা। বড় সন্তান আঁখি মনির বয়স চার বছর। ছোট সন্তান আব্দুর রহমানের বয়স মাত্র ছয় মাস। তাঁর স্ত্রী নাছিমা আক্তার (২৫) অঝোঁরে কাঁদছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, 'মরণঘাতী ক্যান্সার আমার সংসার তছনছ করে দিয়েছে। ছোট ছোট দুই মাসুম বাচ্চা নিয়ে কোথায় ঠাঁই নিবো, বুঝে উঠতে পারছি না। গাড়ি চালালেও স্বামী ছিলেন মাথার ছায়া। আজ তিনি নেই, আমার কিছু নেই।' স্বামীকে কবরস্থানে শুয়ে দেয়ার পরপরই মারা গেছেন শাশুড়িও। নাছিমা আকতার বলেন, শোকের সাগরে ভাসছি আমি। একবাড়ির ছাদ থেকে একদিনে দুইজন মানুষকে আল্লাহ নিয়ে গেছেন। এই শোক সইতে পারছি না।
আব্দুল হাকিমের বাবা বদরশফিও অন্তত ১৫বছর আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আব্দুল হাকিমের বড় এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। এরমধ্যে বড় বোন রোকেয়ার স্বামীও চার বছর আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বড় ভাই নুরুল হাকিম একটি পোল্ট্রি ফার্মে চাকরি করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, পুরো এলাকা শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। অনেকভাবে বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা তুলে চিকিৎসা করিয়েছিলাম আব্দুল হাকিমের। তবে তা যথেষ্ট ছিল না। রফিকুল বলেন, এখন আব্দুল হাকিমের মাকে দাফন কাফনের প্রস্তুতি চলছে। বিকেল সাড়ে চারটায় তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ হাসান বলেন, এক ঘরের দুজন মানুষ একই রোগে মারা গেছে, সেটা কেউ মেনে নিতে পারছে না। সবার মধ্যে শোকের আবহ বিরাজ করছে। এখন আপনারা হাকিমের ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য কিছু একটা করেন।