Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জমিজমার বিরোধ থেকেই শিক্ষক আরিফকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়-র‍্যাব

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফের মধ্যকার জমিজমার বিরোধ থেকেই আরিফকে অপহরণ এবং হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। আজ রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে র‍্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন।

গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার এক বন্ধুর বাসা থেকে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এর আগে রুবেল খাঁন নামের আরেক যুবককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্কুল শিক্ষক আরিফকে অপহরণ পরবর্তী হত্যার ঘটনায় জাহাঙ্গীর ও রুবেলের সম্পৃক্ততা নিয়ে র‍্যাব সংবাদ সম্মেলনটি করে।

লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, স্কুল শিক্ষক আরিফের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল এবং ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আরিফদের কিছু জমি জাহাঙ্গীর দখলে রেখেছিল। তাঁদের দুজনের বাড়ি পাশাপাশি। ৫ আগস্টের পরে আরিফ আইনী পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করে এবং বিভিন্ন সংস্থার কাছে তাঁরা যায়, যেন তাঁদের জমি ফিরে পায়। আরিফ বিভিন্ন সংস্থার কাছে যাচ্ছে এই বিষয়টি যখন জাহাঙ্গীর জানতে পারে তখন তাঁরা পরিকল্পনা করে আরিফকে শায়েস্তা করার জন্য। আরিফের বাসায় ভাড়া থাকতেন রুবেল। তিনি গত ৫-৬মাস আগে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি বাংলালিংক মোবাইল কোম্পানিতে চাকরি করে। রুবেলের আইটি ও মোবাইল সম্পর্কে খুব দক্ষতা ছিল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিভাবে মোবাইল ট্র্যাকিং করে সে বিষয়ে তাঁর খুব ধারণা ছিল। জাহাঙ্গীর ও তাঁর ভাই আজমগীর রুবেলের সঙ্গে একটি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে। আরিফের মুভমেন্ট সম্পর্কে জানার জন্য তাঁরা প্রাথমিকভাবে রুবেলকে দুই হাজার টাকা দেয়। সর্বশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর রুবেল, জাহাঙ্গীর ও আজমগীর ভার্চুয়াল মিটিং করে। সেখানেই চূড়ান্ত হয় আরিফকে অপহরণের। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮সেপ্টেম্বর রাত নয়টার দিকে পেকুয়া চৌমুহনীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে থেকে অপহরণ করা হয়। পরে রাত ১২টার দিকে আরিফের মাকে ফোন করে অপহরণের বিষয়ে জানানো হয়। এরপর রুবেল চট্টগ্রাম চলে যায় এবং আরিফের মোবাইল থেকে ফোন করে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রুবেল আইটি এক্সপার্ট ছিলেন। তিনি আরিফের মোবাইল থেকেই মুক্তিপন দাবি করতেন এবং কথা শেষেই ফোন বন্ধ করে দিতেন, যাতে ট্র্যাক করা না যায়। একারনে র‍্যাব অনেক চেষ্টা করেও কাউকে সনাক্ত করতে পারে নি। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং চট্টগ্রাম শহরের একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে রুবেলকে সনাক্ত করা হয়। গত ১১অক্টোবর আমরা রুবেলকে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার কাঁচাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি, জাহাঙ্গীর ও তাঁর পরিবার ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এরপর গতকাল রাতে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ির তাঁর এক বন্ধুর বাসা থেকে জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জাহাঙ্গীরেরা অপহরণ ও হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, মূলত জমিজমার বিরোধের কারণে আরিফকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়েছে।

১১ অক্টোবর বিকেল চারটার দিকে পেকুয়া সদরের মাতবর পাড়ার নিজ বাড়ির আঙিনার একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে পায়ে ইট বেঁধে দিয়ে পরিত্যক্ত পুকুরটিতে ফেলা হয় বলে জানান পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা। তিনি বলেন, আরিফ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার রুবেল পাঁচদিনের রিমান্ডে আছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

১১ অক্টোবর রাতে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা দেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দাবি করেছিলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি ও তাঁর ভাইয়েরা কেউ জড়িত নন। কেউ এমন ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে পারলে যা শাস্তি দিবে তা মাথা পেতে নেবেন। এমন কলঙ্ক নিয়ে তিনি মরতে চাননা বলেও দাবি করেছিলেন।

শিক্ষক আরিফের লাশ উদ্ধারের পর উত্তেজিত জনতা জাহাঙ্গীরের দুটো বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়। এছাড়া পেকুয়া চৌমুহনীতে জাহাঙ্গীরের ভাই আজমগীরের একটি মার্কেট ও আরেক ভাই ওসমান সরওয়ারের দোকানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।

30Shares