No reporter name available.
কক্সবাজারের পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফ হত্যা মামলায় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুর একটার দিকে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক প্রবাল চক্রবর্তী এই আদেশ দেন।
এর আগে পুলিশ জাহাঙ্গীর আলমকে আদালতে তুলে ১০দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, গ্রেপ্তারের পর আজ সোমবার দুপুরে জাহাঙ্গীর আলমকে আদালতে তোলা হয়। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ১০দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত সবদিক বিবেচনা করে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গত শনিবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার এক বন্ধুর বাসা থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এবিষয়ে গতকাল রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে কক্সবাজার র্যাব-১৫ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। এসময় র্যাব অধিনায়ক লে. কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জমিজমার বিরোধের কারণে শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়েছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত নয়টার দিকে পেকুয়া চৌমুহনীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে থেকে মোহাম্মদ আরিফকে অপহরণ করা হয়। এরপর রাত ১২টার দিকে আরিফের মায়ের মুঠোফোনে কল করে আরিফকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে প্রথম দফায় ২৫ লাখ, দ্বিতীয় দফায় ৩৫ লাখ ও তৃতীয় দফায় ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ১ অক্টোবর শিক্ষক আরিফের ছোটভাই রিয়াদুল ইসলাম বাদি হয়ে পেকুয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
র্যাব জানায়, শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফ অপহৃত হওয়ার পর নানা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু অপহরণকারী তথ্য প্রযুক্তিতে খুব দক্ষ হওয়ায় তাকে আটক করা যায়নি। সর্বশেষ চট্টগ্রামের একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে গত ১০ অক্টোবর দিবাগত রাত তিনটার দিকে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা কাঁচাবাজার এলাকা থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলার তরপুরচণ্ডী এলাকার হাবিবুল্লাহ খাঁনের ছেলে রুবেল খাঁনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশের যৌথ দল। ১১ অক্টোবর বিকেল চারটার দিকে পেকুয়া চৌমুহনীর মাতবর পাড়ার নিজ বাড়ির আঙিনার একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে শিক্ষক আরিফের বস্তাবন্দি পায়ে ইট বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রুবেল শিক্ষক আরিফের বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তিনি একটি মুঠোফোন কোম্পানির মার্কেট ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে পেকুয়ায় কর্মরত ছিলেন।
র্যাব জানিয়েছে, রুবেল অন্তত এক মাস ধরে শিক্ষক আরিফের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছে। কখন আরিফ বাসা থেকে বের হচ্ছে , কোথায় যাচ্ছে সব হিসেব পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর ও তাঁর ভাইদের জানাতেন। এছাড়াও অপহরনের পর আরিফের ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে রুবেল খাঁনই মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন। রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর কাছ থেকে আরিফের মুঠোফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।
আরিফের লাশ উদ্ধারের পর পর পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের দুটি বসতবাড়ি, তাঁর দুই ভাই আজমগীর ও ওসমান সরওয়ারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
আরও একজন গ্রেপ্তার
অপহরণ ও হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওমর ফারুক (২৮) নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে নিজের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওমর ফারুক পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণাফাঁড়ি এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। ফারুক পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বলেন, ওমর ফারুককে শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।