No reporter name available.
খাবারের সঙ্গে সায়ানাইড মিশিয়ে অন্তত ১২ জনকে হত্যার দায়ে এক নারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন থাইল্যান্ডের একটি আদালত। ওই নারীর নাম সারারাত রংসিউথাপর্ন।
গত বুধবার ব্যাংককের একটি আদালত এই রায় দেন। আদালতের নথি অনুযায়ী, ওই নারী খাবারে সায়ানাইড মিশিয়ে তাঁর বান্ধবী সিরিপর্ন খানওংকে হত্যা করেন। এরপর সম্পদ লুট করেন, যার আর্থিক মূল্য ৪ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলারের বেশি।
থাইল্যান্ডের একটি সরকারি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বুধবার তিন ঘণ্টা ধরে মামলার শুনানি চলে। শুনানির একপর্যায়ে বিচারক বলেন, জুয়ায় আসক্ত ওই নারী ঋণের অর্থ জোগাড় করতে খুন করতেন এবং সম্পদ লুট করতেন।
সিরিপর্ন খানওংকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে গত বছর এপ্রিল মাসে সারারাত গ্রেপ্তার হন। সারারাতের সাবেক স্বামী পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। সারারাত গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, বিচ্ছেদের পরও সাবেক স্বামীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল এবং তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
এ ঘটনায় থাইল্যান্ডজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ করে সায়ানাইড বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর বেশ কয়েকটি অমীমাংসিত মামলা নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়।
পুলিশ আগে বলেছিল, সিসিটিভি ফুটেজে অচেতন হয়ে পড়া এবং মারা যাওয়ার আগে সিরিপর্নকে সারারাতের সঙ্গে দেখা গেছে। ময়নাতদন্তে সিরিপর্নের শরীরে সায়ানাইডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বেশ কয়েকটি হত্যার ঘটনার সঙ্গে মিল পান। এসব হত্যার ঘটনায়ও হত্যার শিকার ব্যক্তি সারারাতের সঙ্গে খাবার বা পানীয় খেয়েছিলেন। এরপর মারা গেছেন।
সারারাত গ্রেপ্তার হওয়ার পর একজন নারী পুলিশের কাছে আসেন এবং অভিযোগ করেন, কয়েক বছর আগে তাঁকেও বিষপ্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন সারারাত। ২০২০ সালের ওই ঘটনায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। সেবার কোনোমতে তাঁর জীবন রক্ষা পায়। কিন্তু তিনি এর আগে এ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে ভয় পেয়েছিলেন। কারণ, সারারাতের সঙ্গে তাঁর সাবেক স্বামীর যোগাযোগ ছিল। তিনি পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন।
আদালতে শুনানির সময় সারারাত সাক্ষ্য দেননি। আদালত তাঁকে পূর্বপরিকল্পিত হত্যা, ডাকাতির কারণে মৃত্যু, হত্যার উদ্দেশ্যে খাবার ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যে বিষপ্রয়োগের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ছাড়াও তিনি যেসব জিনিস চুরি করেছেন, সেগুলোর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
আদালত যখন রায় ঘোষণা করেন, তখন সেখানে উপস্থিত সিরিপর্নের পরিবারের সদস্যদের চোখ ভিজে ওঠে। সারারাত তাদের দিকে একবারও তাকাননি বলে টেলিভিশনের খবরে বলা হয়। তবে শুনানি চলার সময় তিনি হাসছিলেন এবং নিজের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
সারারাতের আইনজীবী ও তাঁর সাবেক স্বামীকেও বুধবার কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে রায়ের সারসংক্ষেপে বলা হয়, সারারাতের আইনজীবী তাঁর সাবেক স্বামী উইটন রংসিউথাপর্নকে তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে যায় এমন প্রমাণ নষ্ট করতে বা লুকিয়ে ফেলতে বলেছিলেন। এ জন্য আদালত উইটনকে ১ বছর ৪ মাস এবং আইনজীবী থানিছা একসুওয়ানওয়াতকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। তবে তাঁরা জামিন পেয়েছেন এবং তাঁদের আপিল করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি আদালত বিবেচনা করছেন।
সারারাত তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন এবং আপিল করার পরিকল্পনা করছেন।
২০০৯ সালের পর থাইল্যান্ডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বন্ধ ছিল। এরপর ২০১৮ সালে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপর আর কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি। যদিও কয়েকটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে।