👤 নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া
কক্সবাজারের চকরিয়ায় হলো ব্লক তৈরীর মিকচার মেশিন পরিস্কারের সময় হঠাৎ মেশিন চালু হয়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এসময় মেশিনের পাখায় জড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন আংশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় ওই দুই শ্রমিকের।
আজ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চকরিয়া পৌরসভার তরছপাড়া এলাকায় মাস্টার মাইন্ড ব্লক ফ্যাক্টরিতে এঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে লাশ চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
নিহত শ্রমিকেরা হলেন চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘুনিয়া এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে মো. শাহিন (১৮) ও চকরিয়া পৌরসভার করাইয়াঘোনা এলাকার রুহুল কাদেরের ছেলে কামরান ইসলাম জিহান (২০)।
কারখানাটির কয়েকজন শ্রমিক বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মিকচার মেশিনটি বন্ধ করে শাহিন ও জিহান মেশিনটি পরিস্কার করছিলেন। এসময় হঠাৎ করে মেশিনটি অটো চালু হয়ে যায়। এতে মেশিনের ভিতরে থাকা শাহিন ও জিহান পাখার সঙ্গে পেঁচিয়ে পিষ্ট হন। পরে অন্যান্য শ্রমিকেরা মেশনটি বন্ধ করে ক্ষতবিক্ষত মরদেহ দুটি উদ্ধার করেন।
শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, মেশিনে পেঁচিয়ে দুই শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি প্রথমে কারখানাটির মালিক গিয়াস উদ্দিন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় অন্যান্য শ্রমিকেরা সেটির প্রতিবাদ করেন এবং তাঁরা ওই দুই শ্রমিকের মরদেহ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। নিহত শ্রমিকদের চেহেরা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়ায় তাদের সনাক্ত করতে সমস্যা পোহাতে হয় স্থানীয়দের। পরে নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে পৌঁছে মরদেহ সনাক্ত করেন।
চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চকরিয়া পৌরসভায় দুটি হলো ব্লক তৈরির কারখানা রয়েছে। দুইটি কারখানাই অনুমোদনহীন। গত ২৪ অক্টোবর পশ্চিম বাটাখালী এলাকার 'এলএইচবি অটো ব্লক সেন্টার' নামে কারখানায় অভিযান চালিয়ে হলো ব্লক উৎপাদন বন্ধ করে দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফান উদ্দিন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, এলএইচবি অটো ব্লক সেন্টার বন্ধ করা হলেও অনুমোদনহীন অপর কারখানা তরছপাড়ার মাস্টার মাইন্ড ব্লক ফ্যাক্টরিটি চালু থাকে। সেই কারখানায় দুই শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ইট তৈরির মেশিনটি যখন চালু করা হয় তখন মেশিনের বিকট শব্দের কারণে বাড়িতে কেউ ঘুমাতে পারে না। পাশের বাড়িগুলোতে অসুস্থ মানুষজনের নানা সমস্যা হচ্ছিল। এছাড়া বাচ্চাদের পড়াশোনার সমস্যা হচ্ছিল। একারণে লোকজন উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানালেও প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি।
নিহত শ্রমিক জিহানের বড় ভাই জাহেদুল ইসলাম হাসপাতালে কান্না করতে করতে বলেন, আমার ভাই অটো চালু হওয়া মেশিনে পিস্ট হয়ে মারা গেছেন নাকি অন্য কারণ আছে তা খুঁজে বের করতে হবে প্রশাসনকে। এসময় নিহত আরেক শ্রমিক শাহিনের মা হাসপাতালে এসে ছেলের মরদেহ দেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
ঘটনার বিষয়ে মাস্টার মাইন্ড ব্লক ফ্যাক্টরির মালিক মো. গিয়াস উদ্দিনের বক্তব্য জানতে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ঘটনার পরপরই গিয়াস উদ্দিনকে চকরিয়া থানার আশপাশে ঘুরতে দেখা গেছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। পরে সেখানে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভুঁইয়া বলেন, ঘটনাটি শুনেই হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।