👤 এম দিদারুল করিম, পেকুয়া
জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামিক বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, দেশ ও দেশের বাইরে সকল অপশক্তি রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এজন্য এ মুহুর্তে জাতীয় ঐক্য দরকার।
গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পেকুয়ার তফসিরুল কোরআন মাহফিলের প্রধান বক্তার আলোচনায় মিজানুর রহমান আজহারী এমন কথা বলেন।
পেকুয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই তাফসিরুল কোরআন মাহফিল গতকাল শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১১টায় শেষ হয়। মরহুম মাওলানা শহিদুল্লাহ স্মৃতি সংসদ ও পেকুয়া সমাজ উন্নয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে অষ্টম বারের মতো এই তফসির মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলে নিয়ামত উল্লাহ নিজামী সঞ্চালনা করেন।
ভিডিও কনফারেন্সে লন্ডন থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ
'জালিম ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে আলেমরা বেশি নির্যাতিত হয়েছে'
পেকুয়ার বৃহত্তর সাবেক গুলদি তফসির ময়দানে আয়োজিত মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। তবে লন্ডন অবস্থান করায় তিনি ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। তিনি বলেন, জালিম ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে আলেমরা বেশি নির্যাতিত হয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন সকল মানুষের ঐক্য। যাতে সকল মানুষ, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বসবাস করতে পারি। সবাইকে চেষ্টা করতে হবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকদের মাঝে বৈষম্য যেন না থাকে। তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে আপনাদের সামনে এই কথা বলার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছে।
অনুষ্ঠিত তফসিরুল কোরআন মাহফিলকে ঘিরে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রিয় মুসলিম জনতা মাহফিলের প্যান্ডেলে জমায়েত হতে থাকেন। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা উপেক্ষা করে মাহফিলের প্যান্ডেলেই রাত্রি যাপন করেন তাঁরা। শুক্রবার সকাল থেকে যখন বয়ান শুরু হয় তখন মাহফিল লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে মাহফিলস্থল। সকাল ১০টা থেকে জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত চলে প্রথম অধিবেশন। প্রথম অধিবেশনে বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বদিউল আলমের সভাপতিত্বে কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা পেশ করেন মুফতি কাজী ইব্রাহিম, মাওলানা আবদুল্লাহ আল আমীন, মাওলানা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ ও কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী। বাদে জুমা হইতে মাগরিব পর্যন্ত চলে দ্বিতীয় অধিবেশন। কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী'র সভাপতিত্বে দ্বিতীয় অধিবেশনে তফসির পেশ করেন হাফেজ মুফতি আমীর হামজা, মাওলানা সাদিকুর রহমান আজহারী ও সালাহ উদ্দিন মাক্কী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। তিনি বলেন, এক আল্লাহ ছাড়া আমরা কাউকে মাথানত করি না ও করবো না। ফ্যাসিস্ট সরকার ও জালেম সরকারের পতন হয়েছে। এবার বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা এই মাহফিল থেকে শপথ নিতে চাই, আগামী বাংলাদেশ হবে জাতীয় ঐক্যের বাংলাদেশ, ইসলামের বাংলাদেশ। এই দেশের মাটিতে স্বৈরাচারের স্থান আর হবে না।
বিশেষ অতিথি হিসবে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর কক্সবাজার শহর শাখার আমির ও কক্সবাজার জেলা কর্ম পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল্ ফারুক, পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, উপজেলা জামাতের আমীর ইমতিয়াজ উদ্দিন।
এদিকে দ্বিতীয় অধিবেশন চলাকালীন দুপুর ২টা ১৫মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে পেকুয়া আসেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। তিনি পৌঁছার পর থেকে বিশাল আকারের প্যান্ডেল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আশেপাশে পুরো এলাকা জুড়ে আগত কয়েক লক্ষাধিক মানুষ ছড়িয়ে পড়ে । তৃতীয় অধিবেশনে রাত সাড়ে ৯টায় তফসিরুল কোরআন মাহফিলের মঞ্চে উঠেন মিজানুর রহমান আজহারী।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৯ সালে এই মাহফিলে ড. মিজানুর রহমান আজহারী আসার কথা ছিল। তৎকালীন আওয়ামী সরকারের আমলে তাঁকে আসতে দেয়া হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের মাটিতে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর এটাই প্রথম তাফসির মাহফিল। এ জন্য ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে এক নজরে দেখতে ও তাঁর বয়ান শুনতে লক্ষাধিক মানুষ সমাবেত হয়েছে।
প্রশাসন ও মাহফিল কমিটি সূত্রে জানা যায়, ঐতিহাসিক এই মাহফিলকে ঘিরে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব সার্বক্ষণিক কাজ করেছে। পুরো এলাকা জুড়ে সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে মনিটরিং করা হয়েছে। আমন্ত্রিত ইসলামি বক্তাদের তাফসির শুনার সুবিধার্থে ১০টির বেশি প্রজেক্টর স্থাপন করা হয়েছে। মাহফিলের আশপাশ এলাকার প্রধান সড়কসহ বিভন্ন গ্রামীণ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট নিরসনে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করেছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।