👤 এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া 

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ি জনপদ বার আউলিয়ানগর এলাকার হতদরিদ্র জাফর আলম (৫৮) শনিবার রাতের খাবার খেয়ে পরিবার নিয়ে  ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ঠিক ৯ টার দিকে তার ঘরের দরজায় হাজির হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। সাথে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইরফান উদ্দিন। বাইর থেকে ডাক দেন ঘরে কেউ আছেন? অনেকক্ষণ পর ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন জাফর আলম। 

তিনি মনে করেছিলেন, এত রাতে কেউ তাকে ডাকার কথা নয়। তারপরও শীতের রাতে অনেকটায় আতঙ্ক নিয়ে বিছানা ছেড়ে দরজা খুলেই তিনি হতবাক। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন দুইজন মানুষ। হাতে রয়েছে কম্বল। জাফর আলম নরম কন্ঠে বললেন আপনারা  কারা, এত রাতে আমার ঘরে? সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলে উঠলেন, আমি আপনাদের ইউএনও। আপনি রাতে শীতে কষ্ট পাচ্ছেন তাই আপনাকে শীতের কম্বল দিতে আসলাম।এরপরেই জাফর আলমের হাতে একটি কম্বল তুলে দেন ইউএনও। কম্বল পেয়ে খুশি জাফর আলম। এমন ভাবে ইউএনও তাঁর বাড়িতে আসবে কখনো ভাবেননি তিনি। হঠাৎ ইউএনওকে বাসায় পেয়ে বলছিলেন তার কষ্টের কথা।

গতকাল শনিবার রাতে শুধু জাফর আলম নয়, বার আউলিয়ানগরের পাহাড়ি জনপদের অন্তত শতাধিক গরীব মানুষের বাড়ির দরজায় গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তুলে শীতের কম্বল দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। একইভাবে রাত দশটার দিকে উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জালিয়াপাড়া এলাকার শতাধিক পরিবারের হতদরিদ্র ও গরীব মানুষের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ করলেন ইউএনও আতিকুর রহমান ও এসিল্যান্ড ইরফান উদ্দিন। জালিয়াপাড়া গ্রামে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে বৃদ্ধ মহিলাদের গায়ে শীতের কম্বল জড়িয়ে দিচ্ছেন ইউএনও। রাতের আঁধারে ঘরের দরজায় শীতের কম্বল পেয়ে খুশি জালিয়াপাড়া গ্রামের গরীব মানুষগুলো। অনুরূপভাবে গতকাল রাত এগারোটার দিকে চকরিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কসাইপাড়া এলাকায় গরীব মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে শীতের কম্বল বিতরণ করেন তিনি।

প্রচন্ড শীতের এই রাতে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া কম্বল সঙ্গে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুর রহমান উপজেলার কাকারা, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার কসাইপাড়া এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে নিজের হাতে কম্বল গায়ে জড়িয়ে দেন শীতার্তদের। রাস্তার পাশে, প্রত্যন্ত গ্রামের প্রকৃত অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের খুঁজে খুঁজে কম্বল দেন তিনি। এ সময় তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শোনেন এবং যাদের বেশি প্রয়োজন এমন গরিব দুস্থদের হাতে কম্বল তুলে দেন তিনি। তীব্র শীতের মধ্যে কখনও এসব গ্রামে হেঁটে যান আবার কিছুদূর গাড়িতে যান ইউএনও। কম্বল পেয়ে খুশি কসাইপাড়া এলাকার বৃদ্ধ রহিমা খাতুন। তিনি  বলেন, এই শীতে কেউ কোনো খোঁজ না নিলেও ইউএনও নিজে এসে কম্বল দিয়েছেন। কম্বল পেয়ে আমি অনেক খুশি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, উপজেলার জন্য সরকারিভাবে ১১শত শীতের কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শনিবার রাতে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে গরীব মানুষের ঘরে গিয়ে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের হতদরিদ্র নারী পুরুষের মাঝে কম্বল দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে এভাবেই খুঁজে খুঁজে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে শীতের কম্বল বিতরন করবো।

তিনি বলেন, শীতের সময় আর্থিক নানা অসঙ্গতির কারণে গরিব-দুঃখী মানুষগুলো শীত নিবারণ করতে পারেনা। তাই বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলার বেশকিছু এতিমখানায়ও শীতের কম্বল দেওয়া হবে। আমরা মনে করি, সরকারের পাশাপাশি এই শীতে এসব অসহায়, দুস্থ ও দরিদ্রদের পাশে বিত্তবান সবাইকে  এসে দাঁড়ানো উচিত। শনিবার রাতে শীতের কম্বল বিতরণ কালে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ের প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন, চিরিংগা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী তহসিলদার মোহাম্মদ আবুল মনছুর ও স্থানীয় সাংবাদিক এবং উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাবৃন্দ।