কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান রুটিন কাজ করছেন নিজ দপ্তর ছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের অধীন অন্তত ২২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক সকল কাজ। পাশাপাশি তিনি সামলাচ্ছেন উপজেলা পরিষদের প্রশাসক এবং চকরিয়া পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের জনসেবামুলক সকল কর্মকাণ্ড।
এসব দাপ্তরিক কাজের সঙ্গে তিনি সময় ফেলে ছুটে যাচ্ছেন চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অধীনে উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে বাস্তবায়নধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের সরকারি এতসব দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত সময় কাটানো শেষে ইউএনও আতিকুর রহমান গেল এক সপ্তাহ ধরে রাত হলেই বেরিয়ে পড়ছেন শীতার্ত মানুষের জন্য শীতের কম্বল নিয়ে। পর্যায়ক্রমে একদিনে তিনি দুইটি ইউনিয়নে যাচ্ছেন। গ্রামের মেঠোপথ কিংবা পাহাড়ি জনপদ কোনটাই বাদ যাচ্ছে না। যেখানে হতদরিদ্র ও গরীব মানুষের বসবাস বেশি সেখানেই শীতের কম্বল নিয়ে ঘরে ঘরে হাজির হচ্ছেন চকরিয়ার ইউএনও মোঃ আতিকুর রহমান। নিজে ঘরে ঢুকে দেখছেন ওই বাড়িতে লোক সংখ্যা কত, তাদের শীতবস্ত্র আছে কী রকম। এভাবে তিনি গেল এক সপ্তাহ ধরে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে বাড়ি বাড়ি গরীব মানুষের মাঝে শীতের কম্বল হাতে তুলে দিচ্ছেন। রাতের আঁধারে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন অনাথ শিশু তথা এতিমদের। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এতিমখানায় গিয়ে তিনি এতিম শিশুদের গায়ে জড়িয়ে দিচ্ছেন শীতের কম্বল। বাদ যাচ্ছে না পথশিশু কিংবা ভবঘুরে প্রকৃতির মানুষরাও। গাড়ির সামনে দেখামাত্র নেমে গিয়ে বৃদ্ধা মানুষের গায়ে শীতের কম্বল দিয়ে উষ্ণতা জানাচ্ছে।
ইউএনও আতিকুর রহমানের এই মানবিক কাজে প্রতিদিনের সঙ্গী হিসেবে সাথে যাচ্ছেন চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ এরফান উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) দিলীপ দাস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী তহসিলদার মোহাম্মদ আবুল মনছুর ছাড়াও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং আনসার সদস্যরা।
মানবিক কাজের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ও খুটাখালী ইউনিয়নে হতদরিদ্র ও গরীব পরিবার সদস্য এবং এতিমখানার শিশুদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। আগেরদিন বুধবার (৮ জানুয়ারি) চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে গিয়ে শীর্তাত হতদরিদ্র মানুষ ও বিভিন্ন এতিমখানায় ছাত্রদের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ করেছেন ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো: এরফান উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিলীপ দাস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন। একইভাবে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) তিনি চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বদরখালী ইউনিয়ন, ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন ও পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়ন শীর্তাত হতদরিদ্র মানুষ ও এতিমখানায় ছাত্রদের মাঝে শীতের কম্বল বিতরণ করেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, সরকারি দাপ্তরিক দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করা আমার অর্পিত দায়িত্ব। দাপ্তরিক কাজ শেষে যখন রাতে বাসায় ফিরে বসে থাকি, কোন কাজ থাকে না, তখন ওই সময়টা আমি চকরিয়া উপজেলার হতদরিদ্র ও গরীব মানুষের জন্য কাজে লাগাই। সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া শীতের কম্বল গুলো নিজে বিভিন্ন এলাকা ভিজিট করে ঘরে ঘরে গিয়ে গরীব ও অসহায় পরিবার দেখে দেখে বিতরন করি।
তিনি বলেন, সরকার শীতার্ত মানুষের জন্য সাধ্য অনুযায়ী কম্বল বরাদ্দ দিয়েছেন, তা আমরা বিতরন করে যাচ্ছি। আমি মনে করি, সমাজের বিত্তবান দানশীল ব্যক্তিরা ইচ্ছে করলে শীতের এইদিনে গরীব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, মানবিক কাজে সহায়তা করতে পারে। আসুন সবাই শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই। বাড়িয়ে দেই ভালোবাসার হাত। জয় হোক মানবতার।