👤 নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা সদরের কহলখালী খালটি খননের ফলে বন্যা থেকে রক্ষা পাবে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। এছাড়া বন্যায় ডুববে না পেকুয়ার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পেকুয়া বাজার ও পেকুয়া চৌমুহনী। নতুন করে চাষাবাদ হবে অন্তত ১২শত একর জমিতে।
এক মাস ধরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সহায়তায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) কহলখালী খাল খননের কাজ করছে। একশত শ্রমিক দিয়ে ৫০ দিনে পেকুয়া বাজার থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত অন্তত দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই খালটি খনন করা হচ্ছে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পেকুয়া চৌমুহনী এলাকায় ৭০-৮০জন শ্রমিক খাল থেকে ময়লা তোলার কাজ করছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ কোদাল দিয়ে খালের দু'পাড় কাটছেন। তারপর খাল থেকে তোলা মাটি পাড়ে ফেলা হচ্ছে। কয়েকজন শ্রমিক খালের ওপর নির্মিত দোকান-পাটের খুঁটি কাটছে।
স্থানীয় মিয়াপাড়ার কবির হোসেন (৪৫) প্রথম আলোকে বলেন, অন্তত পাঁচ বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে জমিতে চাষ হয়নি। এই এলাকার বেশিরভাগ জমি কহলখালী খালের পানির ওপর নির্ভরশীল। দখল আর দূষণে খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ার পর থেকে পানি পাওয়া যায়নি। বাজার ও স্টেশনের সব ময়লা এবং কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের মেডিকেল বর্জ্য প্রকাশ্যে খালে ফেলা হয়। তিনি বলেন, এখন খালটি খনন আর পরিষ্কার করায় এবছর অন্তত ১২শত একর জমিতে চাষাবাদ হবে।
শেখেরকিল্লাহ ঘোনা এলাকার বাসিন্দা ও কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির (৩৯) বলেন, কহলখালী জোয়ার-ভাটার খাল। তবে শুষ্ক মৌসুমে পেকুয়া বাজার এলাকায় স্লুইসগেট আটকে দিয়ে এই খালের মিঠা পানি দিয়ে কৃষকেরা চাষ করতেন। খালের পানি ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ভরে যাওয়ায় মানুষ চাষাবাদের জন্য সাব মার্সিবল পাম্প (গভীর নলকূপ) বসিয়েছে। এসবের ফলে এখন এলাকায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। খালটি পরিষ্কার রেখে গভীর নলকূপগুলো সরিয়ে নিতে হবে।
স্থানীয় অন্তত ১০-১২জন বাসিন্দা বলেন, কহলখালী খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে পেকুয়ার মানুষ প্রথম ধাক্কা খায় ২০১৫ সালে। ওই সময় বন্যায় উপজেলা পরিষদ, থানা, পেকুয়া বাজার, চৌমুহনী স্টেশন অন্তত চার থেকে পাঁচফুট পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর ২০১৬ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফুর রশিদ খান উদ্যোগ নিয়ে কহলখালী খাল খনন করেন। কিন্তু বছর তিনেক না যেতেই খালটি আবার ভরাট করে ফেলা হয়। এরপর থেকে বর্ষা এলেই মানুষের বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে।
কহলখালী খালের দখল আর দূষণ নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠন খালটি খননের উদ্যোগ নিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সর্বশেষ গত বছরের ১২আগস্ট পেকুয়ার অন্তত ৫০টি সামাজিক সংগঠন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে কহলখালী খাল খননের উদ্যোগ নিতে দাবি জানান। এরই প্রেক্ষিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রিক খালটি খননের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) এর তদারক কর্মকর্তা হোসনে মোবারক বলেন, পেকুয়ায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করার সময় বিভিন্ন পক্ষ থেকে কহলখালী খাল খননের দাবি উঠে। এরপর ডব্লিউএফপির সহায়তায় ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কহলখালী খনন করা হচ্ছে।
রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) এর প্রকল্প সমন্বয়কারী রুহুল কুদ্দুস বলেন, কহলখালী খালটি ভরাট হয়ে মৃতপ্রায়। সবার সহযোগিতায় খালটি পুনরুদ্ধার ও দুষণমুক্ত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। খননের পর সবার দৃষ্টি থাকা দরকার যাতে খালটি ফের দখল আর দূষণের কবলে না পড়ে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ফোকাল পারসন প্রণব কুমার দে বলেন, কহলখালী খাল নিয়ে সার্ভে করতে গিয়ে দেখা গেছে খালটি খনন করা গেলে অন্তত ২০হাজার মানুষ বন্যা থেকে রক্ষা পাবে এবং ১২শত একর জমিতে নতুন করে চাষাবাদ হবে। বৃহৎ একটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ থাকায় খালটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী বলেন, কহলখালী খালের পাড় যাঁরা দখল করেছিলেন তাঁদের উচ্ছেদ করে খালটি খনন করা হয়েছে। খালে যাতে আর কেউ ময়লা-আবর্জনা না ফেলে সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। পূনরায় কেউ দখল করলে বা ময়লা ফেললে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।