👤 নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের উচিতারবিল এলাকার জিএলবি নামক একটি ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে পাঁচ বছর আগে। ভাটাটিতে ২০২০ সালের পর আর ইট উৎপাদন হয়নি। আজ বুধবার দুপুরে সেই বন্ধ ইটভাটায় চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফান উদ্দিনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে স্কেভেটর দিয়ে ইটভাটার অফিস কক্ষ, ভাটার চিমনি গুড়িয়ে দিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর এলাকায় এএমবি, ডিবিএম ও ইউবিএম-এই তিনটি এবং হারবাং ইউনিয়নের গয়ালমারা এলাকায় এসবিএম নামক একটি ইটভাটা অবৈধভাবে চলছে। এসব ভাটার একটারও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেই। এসব অবৈধ ইটভাটার একটিতেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এসব ইটভাটা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। প্রতিটি ভাটায় ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি ভাটার ইট উৎপাদনে পাহাড়ের মাটিও ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
উচিতার বিল এলাকায় অবস্থিত জিএলবি নামক ইটভাটাটির মালিক ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী।
আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ইটভাটায় ঢুকতেই বা পাশে বরই বাগান আর ডান পাশে তামাকখেত ও ধান চাষের জমি। ৩০ ফুট সামনে ইটভাটার মেঝে ও চিমনি। চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফান উদ্দিন ভাটার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে চিমনি গুড়িয়ে দিতে নির্দেশ দিচ্ছেন। স্কেভেটরের চালক চিমনি গুড়িয়ে দেন। এসময় স্থানীয় লোকজন সেখানে ভিড় করেন। থানা পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ ভাটার কাছে যেতে মানুষকে নিষেধ করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা দিলোয়ারা বেগম (৪৫) বলেন, পাঁচ বছর ধরে ইটভাটাটি বন্ধ রয়েছে। একারণে ভাটার জমিতে বরই, ধান ও তামাক খেত করা হয়েছে। হঠাৎ করে এসিল্যাণ্ড ভাটাটি ভাঙচুর শুরু করেছেন। একই কথা বলেন স্থানীয় আনোয়ার হোসেনও। তিনি বলেন, যেহেতু ইট উৎপাদন বন্ধ। তাই এটি পরিবেশ দূষণ করছে না। এছাড়া এটি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর নিজস্ব খতিয়ানভুক্ত জমিতে।
শুধু গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর ইটভাটা নয়, গতকাল মঙ্গলবার হারবাং এলাকার আরও দুটি বন্ধ ইটভাটায় অভিযান চালান সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফান উদ্দিন। অথচ পাশের এসবিএল ভাটাটিতে ইট উৎপাদন চললেও সেটিতে অভিযান চালানো হয়নি।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের মতো গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীও পালিয়ে গেছেন। তবে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার খোলা রয়েছে। তিনি বলেন, আমার ভাটা প্রশাসনকে জানিয়ে বন্ধ করেছি ২০২০ সালে। এরপর থেকে এখানে ইট উৎপাদন হয় না। প্রশাসন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার ভাটায় অভিযানের নামে ভাঙচুর চালিয়েছেন। তিনি বলেন, চকরিয়ার মধ্যে চারটি ইটভাটা ইট উৎপাদন করছে। একটা ইটভাটারও লাইসেন্স নেই। অথচ আমার ইটভাটা কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত। যেহেতু ইট উৎপাদন করি না, তাই লাইসেন্স নবায়ন করিনি।
জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফান উদ্দিন বলেন, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসনের জেএম শাখার নির্দেশনায় জিবিএল ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়েছে। বন্ধ ইটভাটাগুলোতে কেন অভিযান চালানো হয়েছে এসবের বিস্তারিত তথ্য ওইসব জায়গায় গেলে পাওয়া যাবে। উৎপাদনে থাকা ইটভাটাগুলোতে অভিযান না চালাতে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এরফান উদ্দিন।