Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল, ৩৪ বছরেও অরক্ষিত ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ

আজ সেই ভয়াল  ২৯ এপ্রিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এক দুঃসহ স্মৃতি ও শোকাবহ দিন আজ। ৩৪ বছর আগে ১৯৯১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকুলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে স্মরণকালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। 

ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবলীলার পর ৩৪ বছর সময় অতিবাহিত হলেও এখনো অরক্ষিত রয়ে গেছে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলাসহ কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার রক্ষাকবচ খ্যাত ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর কিছু কিছু এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের অজুহাত জোড়াতালির কাজ করলেও ৩৪ বছরে নির্মিত হয়নি টেকসই ও উচ্চতা সম্পন্ন বেড়িবাঁধ। 

ঘুর্ণিঝড় পরবর্তী ৩৪ বছর সময়ে বেশকটি সরকার বাংলাদেশের রাস্ট্র ক্ষমতায় এসে দেশ পরিচালনা করে গেলেও বারবার উপেক্ষিত থেকে গেছে দেশের  সংকটাপন্ন উপকুলীয় অঞ্চলের সুরক্ষা বেস্টনী তৈরির টেকসই পরিকল্পনা। এমন প্রেক্ষাপটে এখনো প্রতিবছর বর্ষাকালে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের ঘনঘটা  শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে উঠেন ১৯৯১ সালে স্বজন হারানো লাখো মানুষ। 

তথা সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল  রাতের ঘূর্ণিঝড় ও ভয়াবহতম জলোচ্ছ্বাস  কেড়ে নিয়েছিলো উপকূলীয় অঞ্চলের লাখো মানুষের প্রাণ। নিহতদের মধ্যে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন অন্তত ২৫ হাজার। জলোচ্ছ্বাসে সেইদন মানুষের পাশাপাশি 

প্রাণ যায় লাখ লাখ গবাদি পশুর। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ উপকূলীয় এলাকা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পরিণত হয় বিরাণভূমি তথা মৃত্যুপুরীতে।

জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতের সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কথা স্মরণ করে আজও শিউরে ওঠেন উপকূলের স্বজনহারা মানুষগুলো। মূলত সেই সময় উপকুলে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় উপকূলীয় এলাকা রাতের মধ্যেই সাগরের পানির সাথে একাকার হয়ে যায়। ঘুণিঝড়ের পর ৩৪ বছর সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো চকরিয়া পেকুয়া উপজেলার উপকুলজুড়ে সেই অরক্ষিত অবস্থা রয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পুরো উপকূল রক্ষায় টেকসই কোনো প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে প্রতিবছর বর্ষাকাল আসলে কেবল সংস্কারের নামে বেড়িবাঁধে জোড়াতালি দিয়েই সময়টা পার করে। ফলে সরকারি বরাদ্দের কোনো সুফল মেলে না এলাকাবাসীর। 

আশার কথা হলো, গেল চারবছর আগে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে  সাবমেরিন ঘাঁটি ঘিরে ওই এলাকায় সাগর উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে চকরিয়া উপজেলার রামপুর চিংড়ি জোন এলাকায় মৎস্য অধিদপ্তর কতৃক নতুন করে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে ৭২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের। এভাবে উপকূলীয় এলাকা জুড়ে এ ধরনের বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন চান চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার জনসাধারণ।

জানতে চাইলে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন , ঘূর্ণীঝড় পরবর্তী উপকূল এখন পুরোপুরি সুরক্ষিত তা আমি বলব না। তবে সেই ঘূর্ণিঝড়ের পর এখন উপকূলের বেড়িবাঁধের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাতারবাড়ীতে টেকসই অর্থাৎ একশ বছর মেয়াদি বেড়িবাঁধ নির্মাণে আমরা জাপানি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আর কুতুবদিয়া দ্বীপের বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকারি অর্থায়নে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন,  চকরিয়া উপজেলার বেড়িবাঁধ গুলোর  গুরুত্বপূর্ণ অংশে ঝুঁকি আছে সেগুলো বিদেশি কোনো অর্থায়নে বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি  সরকারি অর্থায়নে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ চলমান রয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলে মোট ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তদমধ্যে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় সমুদ্র উপকূল, নদীতীরের প্রায় ২৮৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। তন্মধ্যে চকরিয়ায় রয়েছে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার এবং পেকুয়ায় ২৪০ কিলোমিটার। এই বেড়িবাঁধের মধ্যে চকরিয়ার প্রায় ৩৬ কিলোমিটার অংশ ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। 

অপরদিকে পেকুয়া উপজেলার ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে একেবারে নাজুক অবস্থায় রয়েছে প্রায় ৭ কিলোমিটার। সেই বেড়িবাঁধ টেকসই ও আধুনিকভাবে নির্মাণের জন্য বর্তমানে সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। 

চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, চিরিঙ্গা, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, ডুলাহাজারা ও পেকুয়ার মগনামা, রাজাখালী, উজানটিয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধগুলো নির্মিত হয়েছিল ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে। এর পর মাঝেমধ্যে সমস্যা বিবেচনায় জরুরিভিত্তিতে আপদকালীন কিছু কাজ করা হলেও কার্যত ভঙ্গুর ও জরাজীর্ণ অবস্থায়ই রয়েছে বেড়িবাঁধগুলো। এতে ১৯৯১ সালের মতো ফের যদি বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় তাহলে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাবে না আগের মতো এমন দাবি স্থানীয় অনেক জনপ্রতিনিধির।

মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক  চেয়ারম্যান মো. ইউনুস চৌধুরী বলেন, বানৌজা সাবমেরিন ঘাঁটি স্থাপন করায় কাঁকপাড়া বেড়িবাঁধ টেকসইভাবে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে শরতঘোনা থেকে মগনামা জেটিঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে নীচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। 

চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নূরে হোছাইন আরিফ জানান, দক্ষিণ মাথার ফিশারীঘাট থেকে নাপিতখালী হয়ে মামা-ভাগিনা পাড়া পর্যন্ত  প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। শুধু সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ার নয়, ভারি বর্ষণ হলেই সেই ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ বিলীন হতে সময় লাগবে না।

পশ্চিম বড়ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক  চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা বলেন, কক্সবাজার পাউবোর অধীন চকরিয়া উপজেলার  ‘৬৫ নম্বর পোল্ডারের চৌয়ারফাঁড়ি, ফুলতলা, ডেবডেবি, লম্বাখালী এলাকার সমুদ্র উপকূলের প্রায় ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ একেবারেই বিলীন হয়ে রয়েছে। বিষয়টি অনেক আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

17Shares