👤 নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, জুলাই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এই জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য ওয়াসিমের বাড়ি থেকে জুলাইস্মারক সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব শহীদদের স্মৃতিস্মারক সংগ্রহ করা হবে।
আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে জুলাই আন্দোলনে নিহত কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাঘগুজারা গ্রামে মোহাম্মদ ওয়াসিমের বাড়িতে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এসব কথা বলেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে তিনি ওয়াসিমের বাড়িতে পৌঁছেন। এসময় তিনি ওয়াসিমের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের স্বান্তনা দেন। এসময় ওয়াসিমের স্মৃতিবিজড়িত জার্সি, ছবিসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংস্কৃতি উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেন।
গত বছরের ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর এলাকায় নিহত হন ওয়াসিম। তিনি চট্টগ্রাম কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, 'আপনারা জানেন আমরা জুলাই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটার মূল উদ্দ্যশ্যটা হচ্ছে জুলাই আন্দোলনের বীরত্ব এবং শোকগাঁথা। আপনারা জানেন যে জুলাই আমাদের জন্য একই সঙ্গে বীরত্বের গল্প আবার একই সঙ্গে ভয়াবহ বেদনার গল্প, ওয়াসিমের বাবা এরকম একটি গল্প। আরও কতো হাজারো ওয়াসিম মারা গেছে। এই গল্পগুলোর দিকে যদি তাকান তাহলে বুঝবেন এগুলো আমাদের জাতির জীবনে বেদনার গল্প। ফলে বেদনা এবং বীরত্ব, এ দুইটা আমাদের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।এ দুইটাকে আমরা জুলাই জাদুঘরে সংরক্ষণ করতে চাই, এজ এ লিভিং হিস্ট্রি হিসেবে। যাতে আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে যখন আমরা থাকব না, পরের প্রজন্ম যাতে জানতে পারে ওখানে কি হয়েছে এবং এখান থেকে তারা এই শিক্ষাটা যেন নিতে পারে কি করা যাবে আর কি করা যাবে না বাংলাদেশে। যেন এটা আমরা ঠিকমতো করতে পারি তাহলে বাংলাদেশে এরকম খুনির আর আবির্ভাব ঘটবে না। এটা যদি করতে পারি শহীদদের জন্য প্রফার রেসপেক্ট হবে। সেটার কাজের জন্য আমাদের অনেকগুলো কাজ আছে।একটা হচ্ছে ডকুমেন্টারি বানানো, সেটার কাজ চলছে, অনেক থিওরোশনের কাজ আছে, এগুলো চলছে। একই সঙ্গে শহীদ পরিবার থেকে স্মৃতিস্মারক সংগ্রহ করা, পাশাপাশি শহীদ পরিবারের বাসায় গিয়ে ওদের শুন্যতাকে ডকুমেন্ট করা, সেটা ফটোগ্রাফি এবং ভিডিও'র মধ্যে দিয়ে। যখন ওয়াসিমের বোন মোবাইলে ভাইয়ের ছবিটা ধরছে আপনি হাহাকার বোধ করবেন।আপনি বুঝতে পারবেন যে সব আছে, বোনটা আছে, মোবাইলটা আছে, ভাইটা নেই! এন্ড ডেট উইলবি ট্রো।এই অনুভূতিগুলো যখন জাদুঘরে মানুষ যাবেন তখন সেখানে যেনো তারা পান, সেটা করবার জন্য আমরা সারাদেশে শহীদ পরিবারগুলোতে এ কাজটা চালাবো। শহীদ ওয়াসিমের বাসার মধ্যে দিয়ে এ কাজটা শুরু হলো। কালকে (রোববার) আমরা চিটাগং শান্তের বাসায় যাব, আরেকজন শহীদ আছে শহীদ ওনার নাম তাঁর বাসায় যাব, আরেকজন আছে ওমর ফারুক ওখানে যাব।এই চারটার বাসায় আমি ফিজিক্যালি যাচ্ছি, এরপরে আমাদের টিম আছে। একটা টিম কাজ করছে হাছান ইমাম। আরও অনেকেই মানে জুলাই আন্দোলনের সাথে জড়িত আছে।এরা প্রত্যেকই সারাদেশে অনেকগুলো টিম তৈরি করছে। এই টিমগুলো তারা ফিজিক্যালি ঢাকা থেকে যাবে আবার স্থানীয় টিমের মধ্যে দিয়ে মেমোরি কালেক্টিভ করবে, অ্যাবসেন্স মানে আমরা মানুষগুলোকে হারালাম তার অ্যাবসেন্স তুলে ধরবে। এই অ্যাবসেন্সটাকে তুলে ধরবো এই ফটোগ্রাফির মাধ্যমে। এই কাজটা আজকে শুরু হলো, সারা দেশব্যাপী এক দেড় মাসজুড়ে চলবে।'
এর আগে বিকেল তিনটার দিকে তিনি পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে জুলাই গনঅভ্যুত্থানে আহত পাঁচ জুলাইযোদ্ধার মধ্যে প্রতিজনকে এক লাখ টাকা করে চেক হস্তান্তর করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মইনুল হোসেন চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূর পেয়ারা বেগম, পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা।