
স্টেশনের উত্তর পাশ দিয়ে ঈদগড়-বাইশারী সড়ক। এই সড়ক দিয়ে লামা-নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। চলে শত শত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহন। ব্যস্ততম চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহসড়কের ঈদগাঁও বাস ষ্টেশনে বসে গরুর হাট। ব্যস্ততম সড়কে পশুর হাট বসায় যানজটে তৈরি হচ্ছে জনদুর্ভোগ।
প্রথম দেখায় বোঝার উপায় নেই এটি রাস্তা নাকি পশুর হাট। এমন চিত্র কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার গরুর বাজারের। অভিযোগ রয়েছে, এই বাজারের উন্নয়ন তহবিলে বছরের পর বছর অলস পড়ে আছে লাখ লাখ টাকা। এই অর্থ পড়ে থাকলেও পশুর হাট সম্প্রসারণ বা নতুন স্থান নির্ধারণে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।
স্থানীয়রা জানান, প্রতি শনি-মঙ্গলবার বসে পশুর হাট। হাটের ভেতরে জায়গা স্বল্পতার জন্য প্রায় ১ হাজার মিটার সড়ক দখল করে চলে গরু বেচাকেনা। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কের ওপর পশু রেখে এমনভাবে পথ আটকানো থাকে, যা দেখে যে কারও মনে হতে পারে এটি কোনো সড়ক নয়, বরং পশুর হাট। এ অবস্থায় যানবাহন চলাচলে যেমন ভোগান্তি বাড়ছে, তেমনি দুর্ভোগ বাড়ছে স্থানীয়দের। দীর্ঘদিন ধরে যানবাহন চালক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের এমন দুর্বিষহ অবস্থার কেন অবসান হচ্ছে না, সেটি জানেন না কেউ।
জানা গেছে, ঈদগাঁও উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের মধ্যে ঈদগাঁও পশুর হাটের ইজারা মূল্য সর্বোচ্চ। অথচ গরু-ছাগলের আলাদা কোনো বাজারের ব্যবস্থা না করে দীর্ঘদিন ধরে দায়সারাভাবে সড়কেই বেচাকেনা চলছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সপ্তাহের গতকাল মঙ্গলবার মহাসড়কে বসেছে পশুর হাট। হাটের দিন গরুর বর্জ্যে সড়কজুড়ে তৈরি হয় এক নোংরা পরিবেশ। হাটবারে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে ভিড় বাড়ে যানবাহনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে ঈদগাঁও বাজার। গরুর হাট হিসেবে আশপাশের কয়েক উপজেলায় যার সুনাম রয়েছে। কিন্তু বাজারের যথেষ্ট পরিমাণে নির্ধারিত জায়গা না থাকায় গরু বেচাকেনা চলে সড়কে। এই পশুর হাটে মিলিত হয়েছে রামু, চকরিয়া, নাইক্ষংছড়ি ও লামা এই চার উপজেলা। যার ফলে বাজারটির গুরুত্ব অনেক। বাস ষ্টেশনের মধ্য দিয়ে ঈদগাহ কলেজ গেইট পর্যন্ত রাস্তার প্রায় ১০০০ মিটার দখল করে প্রতি সপ্তাহে চলে গরু বেচাকেনা। হাট বসা সড়ক পারাপারে দুই মিনিটের মতো লাগার কথা, অথচ লাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পশুর হাটের জন্য বাধ্য হয়ে প্রতি সপ্তাহে বন্ধ রাখতে হয় সড়কের দু’পাশের দোকানপাট।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতি হাটবারে লাখ লাখ টাকা ইজারা নিয়েও বাজারের জন্য কোনো নির্ধারিত জায়গা করতে পারেনি পরিচালনা কমিটি। সড়ক দখল করে পশুর হাট বসানোর কারণে যানজট লেগে থাকে। ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষ।
হাটের এক ব্যবসায়ী জানান, ঈদগাঁও বাজার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যের ইজারার হাট। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সড়কে বসছে পশুর হাট। অথচ বাজার উন্নয়ন তহবিলে পরে টাকা। বাজার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের কোনো উদ্যোগই নেই।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হাটবারে দোকান খোলা নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। হাট শেষে অপরিচ্ছন্ন, নোংরা বর্জ্যের গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়েন কেউ কেউ। ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা সড়কের জনদুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তাদের প্রত্যাশা, দ্রুত যাতে গরুর হাটটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
গরু বিক্রেতা হোসেন বলেন, বাজারে জায়গা নেই, তাই আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। যদি কমিটি আমাদের জায়গা দেয়, তাহলে আমরা আর রাস্তায় বসব না।’
ট্রাক চালক মনির জানান, এখানে গরুর হাটের জন্য তীব্র যানজট লেগে থাকে। ফলে গাড়ি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে।
সড়কের ওপর গরু বাজারের কথা স্বীকার করেছেন ইজারাদার আবদু রহিম। তাঁর ভাষ্য, তাদের বাজারে পর্যাপ্ত খোলা মাঠ না থাকায় বিক্রেতারা মাঝে মধ্যে রাস্তার ওপর বসেন। প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা বলেন, ঈদগাঁও গরুর হাটের জায়গা সংকট। যে কারণে বিক্রেতারা গরু নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ান। এই বিষয়ে নিয়মিত তদারকি চলছে।