Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চকরিয়ায় বাড়ি নির্মাণ কাজে বাধা দিয়ে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট, আহত ৬

চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নে পুরোনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি নির্মাণ কাজে বাধা দিয়ে দিনেদুপুরে হামলা চালিয়েছে কতিপয় লোকজন। এসময় তাঁরা নিরীহ পরিবারের বাড়িতে ভাঙচুর-তান্ডব চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট করেছে। ঘটনার সময় ধারালো কিরিচের আঘাতে ও হাতুড়িপেটায় ওই পরিবারের নারীসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। ঈদের দুইদিন পর মঙ্গলবার দুপুরে বরইতলী ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

হামলার একপর্যায়ে আক্রান্ত পরিবার পুলিশের জরুরী সেবা ৯৯৯ এ অভিযোগ জানালে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ হারবাং ফাঁড়ির পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে হামলাকারীরা উল্টো আক্রান্ত পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানির পাশাপাশি তাদের বাড়িভিটা জবরদখল করে নেবে বলে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। বিষয়টি গতকাল রোববার (১৫ জুন) বিকেলে চকরিয়া পৌরশহরে সাংবাদিক সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের গৃহকর্তা সাইফুল ইসলাম বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

আহত সাইফুল ইসলাম জানান, বরইতলী মৌজার বিএস খতিয়ান নং ১৬৬৫ (আরএস খতিয়ান-১৯৪৭), বিএস আন্দর দাগ নং ১৩৩৭১, ১৩৩৭৬ ও ১৩৩৭৭ (আরএস দাগ নং: ৬৮০২, ৬৮১১ ও ৬৮১২) ০.৪০০০ একর জমি আমার পৈত্রিক ওয়ারিশী সম্পত্তি। দীর্ঘ শতবছর ধরে তপশীলোক্ত দাদি আফিয়া খাতুনের ওয়ারিশ হিসেবে পৈত্রিক জমিতে বাড়িঘর তৈরি করে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছি।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে পুরোনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে স্থানীয় শামসুল আলম, আশেকগং নানা উপায়ে বাড়ি নির্মাণ কাজে বাধা দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। এ অবস্থায় সর্বশেষ গত ১০ জুন দুপুরে ২০-২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।

হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন আক্রান্ত পরিবারের
গৃহকর্তা সাইফুল ইসলাম, তাঁর ভাই মো. শহিদুল ইসলাম বাবুল, বোন সাবেকুন নাহার, ছাদেকুল জন্নাত, খালেদা বেগম, নারগিস পারভীন, শাহেদা বেগম।

আহত সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, হামলার সময় আমি প্রানে বাঁচতে লাফ দিয়ে পাশের একটি বাড়িতে ঢুকে পড়লে সেখানে দরজা ভেঙে ঢুকে হামলাকারী সেকাব, জিবরান, মিজানসহ আরও কয়েকজন আমাকে হত্যা চেষ্টা করে। হামলার একপর্যায়ে আহতদের চিৎকারে পার্শ্ববর্তী লোকজন এগিয়ে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। তাদের মধ্যে আহত শহিদুল ইসলাম বাবুলকে (৪৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বাড়িতে ঢুকে হামলা, আমার ভাই-বোন ও স্ত্রীর উপর আক্রমণ চালিয়ে সন্ত্রাসীরা মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, লোহার রড ও সিমেন্টসহ প্রায় ২ লাখ ৮৫ হ্জার টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পুরো হামলার ঘটনাটি হারবাং ফাঁড়ি পুলিশের উপস্থিতিতে সংঘঠিত করেছে সন্ত্রাসীরা।

গৃহকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়িতে হামলার ঘটনাটি দিনেদুপুরে সংঘটিত হয়েছে। সেকারণে হামলায় জড়িতদের সনাক্ত করা হয়েছে। হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় মকবুল আলীর ছেলে ছলিম উল্লাহ (৬০) ছলিম উল্লাহর ছেলে মিজান (৪৫), সেকাব (৩২), জিবরান মোহাম্মদ আশেক (২৫), মো. কাইসার (৪০), সিরাজুল হকের ছেলে মো. নাছির উদ্দিন (৩৮) আনোয়ার হোসেন (৫২), পিয়াস (২৫), নুরুল হকের ছেলে জুনাইদ মুর্সি (৩৬), একই এলাকার আজিজুর রহমান রানা (৩৬), নুরুল আলম (৫০), শামসুল আলমসহ আরও ১০-১২ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী।

আহত সাইফুল ইসলাম বোন সাবেকুন নাহার জানান, আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি অংশের বিএস সংশোধনের জন্য আমার ভাই সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে চকরিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৫১ জনের বিরুদ্ধে একটি অপর মামলা রুজু করেছেন। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। একই বিষয় নিয়ে শামসুল আলম ইতোপূর্বে কক্সবাজারে এডিএম আদালতে একটি অপর মামলাও করেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) চকরিয়ার তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে মালিকানা না থাকায় সামশুল আলমের মামলাটি খারিজ করে দেন আদালত। সেই থেকে মৃত রহিম বক্সের ছেলে শামসুল আলম, মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে শফিক আহমদ ও মোবারক আলীর ছেলে মোকাররম হোসেন দলবল নিয়ে আমার পৈত্রিক ভোগদখলীয় জমি জবরদখলের জন্য নানাভাবে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, হামলাকারী সন্ত্রাসীরা আমাদের আত্মীয় স্বজন নন, তাঁরা আমাদের সম্পত্তির খতিয়ানের অংশিদারও নন। এ অবস্থায় হামলার ঘটনায় জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্থির দাবী জানাচ্ছি।

এব্যাপারে হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির (আইসি) ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনাটি শুনে ওইদিন তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। পরে ঘটনার বিস্তারিত চকরিয়া থানার ওসিকে অবহিত করি এবং দুইপক্ষকে থানায় ওসির কাছে যেতে নির্দেশ দিই।

জানতে চাইলে চকরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ওইদিন ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। এরপর থানায় ঢেকে এনে দুইপক্ষকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, থানায় কোন পক্ষ অভিযোগ দেইনি। তবে দুইপক্ষের কাগজপত্র নিয়ে বৈঠকে বসে তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

1Shares