👤 নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া
মোহাম্মদ আলমগীর। পেকুয়া উপজেলা কৃষকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ২০১৪ সালের পর থেকে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন। এমনকি সদস্য পদ পর্যন্ত নেই। ২০১৫ সালে তাঁর মালিকানাধীন জায়গা জবরদখল করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ২০১৮ সালে জাফর আলম আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এই জবরদখলের সঙ্গে যুক্ত হন তিনিও। ২০২১ সালে আদালতে চলমান মামলায় জাফর আলমকেও পক্ষভুক্ত করেন আলমগীর। বর্তমানে চকরিয়া-পেকুয়ার ৩৮১জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আইনী লড়াই চালাচ্ছেন আলমগীর। কিন্তু আওয়ামী লীগের পটপরিবর্তনের পর ছাত্রদল নেতা বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় প্রধান আসামি এমপি জাফর আলম। গত ১৮জুন মামলাটির এজাহারনামীয় আসামি না হলেও গ্রেপ্তার করা হয় আলমগীরকে। গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো আবেদনে পুলিশ বলেছে, জাফরের নেতৃত্বে ও হুকুমে আলমগীর ছাত্রদলের মিছিলে হামলা করেছে, গুলি করেছে। পুলিশের এমন আচরণে খোদ ক্ষোভ জমেছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে। ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, আলমগীর যেখানে জাফরের বিরুদ্ধে মামলা লড়েছেন সেখানে তাঁর হুকুমে আলমগীর ছাত্রদলের মিছিলে হামলা করার প্রশ্নই আসে না। এটি হাস্যকর অভিযোগ।
জানা যায়, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালীর বাসিন্দা আলমগীর ও তাঁর পূর্ব পুরুষদের বিশাল জমি রয়েছে পেকুয়া বাজারের পাশে। এই জমির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। ২০১৫ সালে বিশাল জমি দখল করে নেন তাঁরা। তখন আলমগীর তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সেই দখলে যুক্ত হন জাফর আলমও। ২০২১ সালের ২২জুন জাফর আলমকে ওই মামলায় পক্ষভুক্ত করেন আলমগীর। তখন আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৮১জনে। জাফরকে আসামি করার তিনমাস পর ২০২১ সালের ১১সেপ্টেম্বর পেকুয়া বাজারে ছাত্রদলের মিছিলে হামলা হয়। এতে বেশকিছু নেতা-কর্মী আহত হন। তখন এ ঘটনায় মামলা না হলেও আওয়ামী লীগের পতনের পর ২০২৪ সালের ২৯ অক্টোবর পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফরহাদ হোছাইন বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় জাফর আলমকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলায় ৩৫জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এই মামলায় মোহাম্মদ আলমগীর আসামি নন।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, মোহাম্মদ আলমগীর ২০২২ সালের এপ্রিলের শুরুতে হার্ট অ্যাটাক করেন। ৭ এপ্রিল তাকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনটি রিং পরানো হয়। এরপর থেকে কার্যত তিনি ঘরবন্দী হয়ে পড়েন। ঘরের সঙ্গে লাগোয়া একটি মুদি দোকান দেন তিনি। বউ-বাচ্চা নিয়ে সে দোকান করে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করেন আলমগীর।
পরিবারের লোকজন বলেন, গত ১৮ জুন রাতে হঠাৎ করে তাঁর দোকানে পুলিশ যায়। তখন ডিউটি অফিসার তাকে জানায় যে ওসি সাহেব তাকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন। ডিউটি অফিসারের কথামতো তিনি ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ছাত্রদল নেতার করা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায়।
আলমগীরের স্ত্রী ছফুরা খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, যে মানুষ গত চারবছর ধরে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি জাফরের বিরুদ্ধে মামলা লড়ছেন, তিনি কিভাবে তাঁর হুকুমে ছাত্রদলের মিছিলে হামলা করেন। তিনি এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার চান।
ছফুরা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী হার্টের রোগী। তিনটি রিং পরানো হয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগে তাঁর সদস্য পদ পর্যন্ত নেই। এবং তিনি এরপর থেকে কখনও কোনো মিটিং মিছিলে যাননি। তাকে অহেতুক পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে জেলে দিয়েছে। এবিষয়ে তিনি পেকুয়ার আপামর মানুষের অভিভাবক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।