
‘নিরীহ’ দুই ব্যক্তিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ও তাঁদের মুক্তির দাবিতে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের সাপেরগাড়া স্টেশনে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৯ আগস্ট দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সাপেরগাড়ার সেগুনবাগিচা এলাকায় বসতঘরে ঢুকে জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ জকিরুল ইসলাম (৫৫) ও মনছুর আলম (৪৫) নামোর দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পরে এই দুজনকে আসামি করে আরও ৮-১০জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে থানায় মামলা করেন জসিমের স্ত্রী সেলিনা আকতার। গ্রেপ্তারের পরপরই এলাকাবাসী জকিরুল ও মনছুরের আটক নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক নেজাম উদ্দিন, মো. আসিফ, আল সেহেরী, আয়েশা বেগম, গ্রেপ্তার জকিরুল ইসলামের মা আলম শাইর, জকিরুল ইসলামের ভাই নজরুল ইসলাম, মেয়ে নাজমা বেগম, গ্রেপ্তার মনছুরের মা খালেদা বেগম, স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম, মোছাম্মৎ কমরুন্নেছা, তছলিমা বেগম, মোহাম্মদ পারভেজ ও মোহাম্মদ ইসমাইল প্রমুখ।
আজ এলাকাবাসীর আয়োজনে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গত বছরের ২১ মে পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন সংঘাতে সাপেরগাড়া এলাকায় আব্দুল কাদের নামের এক ব্যক্তি খুন হন। এই মামলার একজন আসামির নাম আব্দুর রাজ্জাক। তিনি গ্রেপ্তারের ভয়ে স্থান পরিবর্তন করে পাশের জসিম উদ্দিনের বাড়িতে থাকতেন এবং এলাকাবাসীকে জসিমের স্ত্রী সেলিনার আত্মীয় পরিচয় দিতেন। আসা-যাওয়ার মধ্যে সেলিনার সঙ্গে আব্দুর রাজ্জাকের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠলে বাধ সাধেন জসিম। কয়েকবার তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। জসিম শারিরীক প্রতিবন্ধী ছিলেন।
বক্তারা বলেন, ঘটনার সপ্তাহ খানেক আগে জসিম উদ্দিন রাজ্জাককে বাড়িতে আসতে নিষেধ করে দেন। এর জের ধরে স্ত্রীর প্ররোচনায় ও পরিকল্পনায় জসিম উদ্দিনকে খুন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সত্যিই যদি বাইরের কেউ জসিমকে হত্যা করে থাকে তাহলে সেলিনাও তো ঘরে ছিলেন তিনি কেন অক্ষত রয়েছেন। তাঁর শরীরে কোনো আছড় পর্যন্ত কেন লাগেনি? ঘটনার পর পর তিনি পুলিশ ও এলাকাবাসীকে না জানিয়ে দুই ঘন্টা পরে কেন হত্যার ঘটনা প্রকাশ করলেন?
বক্তারা অবিলম্বে মামলার বাদি সেলিনা আকতার ও আব্দুল কাদের খুনের আসামি আব্দুর রাজ্জাককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার মূল রহস্য বের হবে।
বক্তারা জকিরুল ইসলাম ও মনছুর আলমকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে এলাকায় কোনো অভিযোগ নেই, থানায় মামলা নেই। দুইজনই শান্ত ও নিরীহ মানুষ। পুলিশকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তাঁরা।
আব্দুর রাজ্জাক তাঁর বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন বলে স্বীকার করলেও পরকীয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন মামলার বাদি সেলিনা আকতার। সেলিনা আকতার বলেন, এলাকার লোকজন মিথ্যা বলছে। মনছুর ও জকিরুল পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। পুলিশ প্রমাণ না পেলে কখনও তাঁদের গ্রেপ্তার করতো না।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা নিরীহ ও জড়িত নেই বলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখছি। তদন্তে নিরপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হবে।