👤 নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ভারুয়াখালী এলাকার একটি বসতঘর থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাক ও কান দিয়ে রক্ত ঝরায় তৈরি হয়েছে রহস্য। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
ওই নারীর নাম ফাতেমা বেগম (৫৮)। তিনি মৃত নুরুচ্ছফার স্ত্রী। বাড়িতে তিনি একা থাকতেন। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর বসতঘরটি বেড়ার এবং দরজাটিও বেড়ার। যে কেউ দরজাটি খুলতে পারে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফোরকান আলী আহমদ বলেন, ফাতেমা বেগমের এক ছেলে, তিন মেয়ে। ছেলেটি বিয়ে করে শিলখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা জারুলবনিয়ায় বসতি গড়ে থাকেন। মেয়েরা চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় চাকরি করেন এবং যার যার সংসারে থাকেন। ফাতেমার স্বামী মারা গেছেন এক দশক আগে। তিনি ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করেন। স্থানীয় লোকজন তাঁর কাছ থেকে মাঝেমধ্যে পানিপড়া নেন এবং ঝাড়ফুঁক করেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এক নারী ফাতেমার কাছে পানিপড়া নিতে গেলে অনেকক্ষণ ডাকার পরও দরজা খুলছিলেন না। একপর্যায়ে কয়েকজন মিলে ঘরে ঢুকে দেখেন তাঁর নিথর দেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে এবং নাক ও কান দিয়ে রক্ত ঝরছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে রাত নয়টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কক্সবাজার হাসপাতালের মর্গ থেকে ফাতেমার বাড়িতে মরদেহ আনা হয়েছে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
স্থানীয় বাসিন্দা পারভিন আকতার বলেন, পানিপড়া ও ঝাড়ফুঁক নিতে সোমবার বিকেলে তিনি ফাতেমার বাড়িতে যান। ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় চলে আসেন। পরে সন্ধ্যায় তিনিসহ তাঁর স্বামী পুনরায় বাড়িতে গেলে ওই সময়ও দরজা বন্ধ পান। পরে তাঁরা দরজা খোলে ঘরে ঢুকলে ফাতেমাকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন এবং বিষয়টি তাঁরা স্থানীয়দের জানান।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ফাতেমার কাছে সবসময় নগদ টাকা থাকে। ভিক্ষাবৃত্তি ও ঝাড়ফুঁক করে যা পান তা নগদেই রাখেন। এক মাস আগে তাঁর ঘরে ঢুকে কয়েকজন বখাটে ১০হাজার টাকা চুরি করে।
স্থানীয় বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, চুরির ঘটনায় আমি সালিশ করেছিলাম। চোরদের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা উদ্ধারও করে দিই। বাকি টাকা ফাতেমাকে আর দেয়নি চোরের দল। তিনি বলেন, ফাতেমার মৃত্যুতে রহস্য আছে বলে ধারণা করছে সবাই।
স্থানীয়দের ধারণা, এবারও চুরি করতে কেউ না কেউ ফাতেমার ঘরে ঢুকেছিলেন। বাধা দেওয়ায় বা চিনতে পারায় তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। একারণে নাক ও কান দিয়ে পানি ঝরেছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, চিহ্নিত চোরদের কাছ থেকে টাকা চাইলে ফাতেমাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতেন।
পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উগ্যাজাই মারমা বলেন, লাশের শরীরের দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও কানের কাছে ও গলার নিচে রক্ত জমাট রয়েছে। এছাড়া নাক ও কান দিয়ে রক্তও ঝরেছে।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, রহস্য তৈরি হওয়ায় এবং ফাতেমা কিভাবে মারা গেছেন তা বের করতে লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ জানতে পারবো।