👤 মো. কামাল উদ্দিন, চকরিয়া
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার অন্তত ২০টি স্থানে বালু রেখে ব্যবসা করছে কয়েকটি চক্র। এতে তৈরি হয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
সোমবার বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের গয়ালমারা এলাকায় মহাসড়কের পাশে বালু অন্তত এক লাখ ঘনফুট বালু স্তুপ করা হয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক বালুগুলো স্তুপ করছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বালুগুলো স্থানীয় নাজিম উদ্দীনের। বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে করে রাতে সরবরাহ দিয়ে থাকেন তিনি। জানতে চাইলে নাজিম উদ্দীন বলেন, 'আমি নিলাম (অকশন) থেকে বালুগুলো নিয়েছি। বিক্রি করার সুবিধার্থে মহাসড়কের পাশে বালু স্তুপ করেছি। অন্য কোথাও সুবিধাজনক স্থান পাচ্ছি না।'
মহাসড়ক ধরে কক্সবাজার অভিমুখে আগালে এমন স্তুপ আরও চোখে পড়ে। বিশেষ করে বরইতলী, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা ও খুটাখালী এলাকায় মহাসড়কের অন্তত ২০টি স্থানে দুই পাশে বালু স্তুপ করে রাখা হয়েছে। মহাসড়কের পাশে ট্রাক ও পিকআপ দাঁড় করিয়ে বালু ভরা হচ্ছে। অন্তত পাঁচটি এলাকায় মহাসড়কের পাশে মোকাম তৈরা করা হয়েছে। এই মোকাম থেকে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক বের হচ্ছে। অন্য ১৫টি স্থানে বালু মহাসড়কের পাশে রেখে সেখান থেকেই ট্রাকে ভরা হয়। এসময় পাশ ঘেঁষে দূরপাল্লার যানবাহন যেতে দেখা যায়। এতে তৈরি হয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
স্থানীয় লোকজন বলেন, কয়েকটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কের পাশে বালু রেখে ব্যবসা করলেও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কেউ তাঁদের নিষেধ করছে না। দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে বালু ব্যবসা। কখনও তাঁদের বাধা না দেওয়ায় এভাবে ব্যবসা করাটাকে সঠিক মনে করছে তাঁরা।
খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, যাঁরা মহাসড়কের পাশে বালু রেখে ব্যবসা করছে তাঁরা জানেই না পথচারী ও যানবাহনের জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি করেছে। বালু ভরতে ট্রাক ঢোকানো বা বালু ভরে ট্রাক বের করাতে গিয়ে যেকোনো মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বালু ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ব্যবসা করায় তাঁদের কাছে এটা এখন সঠিক কাজ মনে হচ্ছে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চকরিয়া উপজেলা সভাপতি সোহেল মাহমুদ বলেন, মহাসড়কের পাশ ঘেষেঁ বালু রেখে ব্যবসা করা নিরাপদ সড়কের অন্তরায়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে পথচারীরা ছোটখাটো দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করে সে তুলনায় সরু। এছাড়া প্রচুর বাঁক রয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। তার ওপর সড়কের পাশে বালুর স্তূপ রাখা মোটেও কাম্য নয়।
চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে বালুগুলো এমনভাবে রাখা হয়েছে মহাসড়কের অন্য পাশ থেকে গাড়ি এলে দেখাও যায় না। গত পাঁচ মাসে অন্তত তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এই বালু ব্যবসার কারনে। আমরা অনেকবার যাঁরা বালু ব্যবসা করছে তাঁদের নিষেধ করেছি। কিন্তু তাঁরা কথা কানে তুলেন না।
চকরিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুপায়ণ দেব বলেন, সড়কের পাশে বালু রেখে ব্যবসা করা অবশ্যই গর্হিত কাজ। সড়ক ও জনপথ বিভাগ উদ্যোগ নিলে উপজেলা প্রশাসন অবশ্যই সাথে থাকবে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, বালু ব্যবসায়ীদের মৌখিক ও লিখিতভাবে সতর্ক করা হলেও তারা সরে যাচ্ছে না। শিগগিরই এসব বালুর স্তুপ উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।