
‘ইউএনও যখন শিক্ষক’ কথাটির মাধ্যমে বোঝা যায়, যখন কোনো উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) একটি উপজেলার অর্পিত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করেন, তখন এমন আবহ সৃষ্টি হয়। তাঁর এধরনের ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েও শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক মহলে প্রশংসার ঢেঁকুর উঠে।
সোমবার মধ্যরাতে এমন একটি পরিবেশের অবতারণা হয়েছে কক্সবাজারের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ স্কুলের হোস্টেলে। রাত এগারোটা ১৫ মিনিটে স্কুল হোস্টেলে আচমকা হাজির হন স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন মুহাম্মদ আলমগীর, বিদ্যাপীঠ স্কুলের অ্যাডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. সালাহউদ্দিন।
ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান যখন স্কুলের হোস্টেলে উপস্থিত হন, তখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে খাবার খেয়ে নিদ্রা যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিছু শিক্ষার্থী তখনও পড়ার টেবিলে ছিলো। অবশ্য সেসময় হোস্টেল সুপার শফিউল আলম শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষনে অফিসকক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
এরপর স্কুল সভাপতি ইউএনও আতিকুর রহমান হোস্টেল সুপারের উপস্থিতিতে সেখানে অবস্থানরত ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ইংরেজিসহ বেশকটি বিষয়ে পাঠদান করেন।
মাত্র ১৫ মিনিটের শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান শেষে ইউএনও হোস্টেল অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং লেখাপড়ার মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
এসময় তিনি শিক্ষকের ভূমিকার পাশাপাশি একজন দায়িত্বশীল অভিভাবকের মতো শিক্ষার্থীদেরকে মোবাইল আসত্তি থেকে বিরত থাকা, সঠিক সময়ে খাওয়া, ঘুম, পড়ালেখা, খেলাধুলা ও ইবাদত করার উপদেশ দেন-এমনটাই জানিয়েছেন হোস্টেল সুপার শফিউল আলম।
ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, প্রশাসনিক নানা কাজের চাপের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিজিট করা সম্ভব হয় না, তারপরও সময় সুযোগ পেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর সামগ্রিক পরিবেশ পরিদর্শন করার চেষ্টা করি। চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ স্কুল অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হবার পর প্রকৃতপক্ষে স্কুলের লেখাপড়ার পরিবেশ কেমন হচ্ছে তা পর্যবেক্ষন করতে কাউকে না জানিয়ে রাতেই স্কুল পরিদর্শন করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্কুলের হোস্টেলে পড়াশোনারত শিক্ষার্থীদের মাঝে কয়েকটি বিষয়ে পাঠদান করা হয়েছে, আবার শিক্ষার্থীদের কাছে উত্তরও জানা হয়েছে। আমার প্রশ্নের সবগুলো উত্তর শিক্ষার্থীরা সাবলীল ভাষায় দিতে পেরেছে।
ইউএনও আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, শুধু চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ না, লেখাপড়ার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার উন্নত পরিবেশ নিশ্চিতে পর্যায়ক্রমে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ ভিজিট করা হবে। যাতে করে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার আমূল পরিবর্তন ঘটে।
চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল আখের বলেন, কাউকে না জানিয়ে রাতেই ইউএনও স্যার আকস্মিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। সেসময় হোস্টেলে অবস্থানরত ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিনি পাঠদান করেছেন। তিনি বলেন, প্রশাসনিক কোন অফিসার হঠাৎ করে বিদ্যালয় ভিজিট করা এবং শিক্ষার্থীদের পাঠদান করার মতো ঘটনাগুলো সাধারণত শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়, অনুপ্রাণিত করে, শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং শিক্ষকদের কর্মের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হতে নির্দেশনা বহন করে।