Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শততম টেস্টের সামনে দাঁড়িয়ে মুশফিক

বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই দশকের যাত্রায় তার নামটা আলাদা করেই উচ্চারিত হবে। যে কজন ক্রিকেটার কঠোর পরিশ্রম, মানসিক দৃঢ়তা ও অবিচল নিবেদন দিয়ে নিজেদের আলাদা করে তুলেছেন, মুশফিকুর রহিম তাদের শীর্ষ সারির একজন। আর তাই যখন তিনি মিরপুরে পা রাখবেন ১৯ নভেম্বর, ম্যাচটি আর কেবল একটি টেস্ট থাকবে না-এটি হয়ে উঠবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়ের সূচনা।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি হবে মুশফিকের ক্যারিয়ারের শততম টেস্ট, এমন এক মাইলফলক যা দেশের আগে কোনো ক্রিকেটার অর্জন করতে পারেননি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বহু প্রথমের সাক্ষী তিনি; এবার আসছে আরেকটি ‘প্রথম’, যা জাতীয় দলের যাত্রাপথকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

মুশফিকের টেস্ট অভিষেক ২০০৫ সালে। কৈশোরের সেই সূচনা থেকে আজকের সুদীর্ঘ পথচলা, তার ক্যারিয়ার যেন বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের বিবর্তনেরই প্রতিচ্ছবি। কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং হোক বা উইকেটের পিছনে নিরলস দায়িত্ব পালন, কিংবা দলের ভেতরে স্থায়ী অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে জায়গা করে নেওয়া-সবখানেই তাকে পাওয়া গেছে একই নিষ্ঠায়। দেশের হয়ে ৯৯টি ম্যাচ খেলে তিনি শুধু পরিসংখ্যানই জমা করেননি; দলের সংস্কৃতি, পরিশ্রমের মানদণ্ড ও জেদের অভ্যাসেও রেখেছেন স্থায়ী ছাপ।

তবে শততম টেস্টকে ঘিরে সম্প্রতি একটি প্রশ্ন জোরালো হয়ে উঠেছে-এটাই কি তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শেষ অধ্যায়? অনেকেই মনে করেন, শততম ম্যাচকে সম্মানজনক বিদায়ের মুহূর্ত বানানোর সুযোগ তার সামনে খুলে যাচ্ছে। কিন্তু জানা গেছে, মুশফিক নিজে এমন কোনো পরিকল্পনা করেননি। টি-টোয়েন্টি থেকে আগেই বিদায় নিয়েছেন, চলতি বছর সমালোচনার মুখে ছাড়তে হয়েছে ওয়ানডে ফরম্যাটও। তবুও টেস্ট ক্রিকেটে তার উদ্যম এখনো অটুট। তাকে ঘিরে বিশেষজ্ঞ ও সতীর্থদের মূল্যায়নে পরিষ্কার একটি বিষয়, লাল বলের ক্রিকেটে এখনও তিনি দলের অন্যতম ভরসাস্থল।

সিলেট টেস্ট জয়ের পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত যে কথাগুলো বলেছেন, তা থেকেই বোঝা যায় দলের ভেতরে মুশফিকের গুরুত্ব কতটা গভীর। শান্ত বলেছেন, দলের সবাই মুশফিকের এই অর্জন উদযাপন করতে চায়। পাঁচ দিন জুড়ে তাকে সম্মান ও আনন্দ দেওয়ার ইচ্ছা তাদের প্রবল। শান্ত এটাও স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশে আগে এমন অর্জনের উদাহরণ নেই, তাই সতীর্থ হিসেবে তাদের দায়িত্ব মুশফিককে সেই প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া।

শান্ত বলছিলেন, ‘দেখুন, আমি আশা করব মুশফিক ভাই ১০০ টেস্ট খেলার পরও যেন উনি আরও চালিয়ে যান। কারণ ওরকম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আমাদের টেস্ট দলে প্রয়োজন। আমি আশা করব সেটাও যেন উনি চালিয়ে যায়।’

শুধু অর্জন নয়, ভবিষ্যত নিয়েও তার প্রত্যাশা জানিয়েছেন অধিনায়ক শান্ত। তিনি চান শততম টেস্টের পরও মুশফিক যেন দলের সঙ্গে থাকেন, কারণ অভিজ্ঞতার দিক থেকে এমন ক্রিকেটার যে কোনো টেস্ট দলের মেরুদণ্ড হয়ে ওঠেন। মাঝপথে ভেঙে পড়ার মুহূর্তে কিংবা প্রতিকূলতার সামনে দলকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে মুশফিকের জেদ ও শৃঙ্খলা বহুবার বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে। শান্ত মনে করেন, এই মানসিক শক্তি দলকে আরও কিছুদিন প্রয়োজন।

টেস্ট ক্রিকেটকে সর্বদাই নিজের সবচেয়ে প্রিয় মঞ্চ বলে মনে করেছেন মুশফিক। প্রতিটি ইনিংসে তার ব্যাটিং যেন প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করার দৃষ্টান্ত। পরিসংখ্যান বলবে, শততম টেস্টে পৌঁছানো তার কঠোর পরিশ্রমের ফল। কিন্তু তার সঙ্গে যোগ হবে আরও এক স্তর, বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি তার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি। দল যখন শক্তিশালী ভিত্তির খোঁজে ছিল, তখন তিনিই সেই ভিত্তির অন্যতম স্তম্ভ হয়ে উঠেছিলেন। আর তাই মিরপুরের এই ম্যাচ কেবল তার ক্যারিয়ারের সংখ্যাগত অর্জন নয়, এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের যাত্রাপথেও এক অর্থবহ মুহূর্ত।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টটি তাই এখন হয়ে উঠছে এক আবেগঘন মঞ্চ। জয়ের লক্ষ্য থাকবেই, কিন্তু সেই লক্ষ্য ছাপিয়ে থাকবে একজন ক্রিকেটারের দীর্ঘ সংগ্রাম, প্রতিশ্রুতি আর প্রত্যাবর্তনের গল্প। যখন মুশফিক মাঠে নামবেন শততমবারের মতো, তিনি শুধু রেকর্ডই গড়বেন না, বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরেকটি ঐতিহাসিক দিনের সাক্ষী করে রাখবেন তিনি।

0Shares