
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুরে এএমবি-১, এএমবি-২, এএমবি-৩ নামে পরিবেশবান্ধব ঝিকঝাক চিমনির তিনটি ইটভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসনের একটি টিম।
রোববার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক জমির উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম, বান্দরবান পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ র্যাব পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। এতে ওই তিনটি ইটভাটার প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মালিকরা।
মানিকপুরের অভিযান শেষে প্রশাসনের ওই অভিযান টিমের সদস্যরা পাশের লামা উপজেলার ফাইতং এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানের নামে ইটভাটা ধ্বংসের জন্য উপস্থিত হলে সেখানে অভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলে শ্রমিকরা। দুপুর ১২টার দিকে শত-শত শ্রমিক তাদের কর্মসংস্থান ধ্বংস না করার দাবিতে কাফনের কাপড় পড়ে ইটভাটা ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সড়কে শুয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে মালিক শ্রমিকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে পাহাড়ি সড়ক পথে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে অভিযান টিমের সদস্যরা। এ অবস্থায় অভিযানে অংশ নেওয়া পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গাড়ি বহর থেমে যায়। পরে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে প্রশাসন দুইদিনের জন্য ফাইতংয়ে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত ঘোষণা করে চলে যায়।
চকরিয়া উপজেলার মানিকপুরে পাঁচটি ও পাশের
ফাইতং ইউনিয়নে প্রায় ২৫টির বেশি ইটভাটায় ২০ হাজারের অধিক শ্রমিক দীর্ঘ দুইযুগ ধরে শ্রমের বিনিময়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন ।
ইটভাটা মালিক ও শ্রমিকররা জানিয়েছেন, চকরিয়া উপজেলার পাশাপাশি পাশের পেকুয়া, মহেশখালী উপজেলার মানুষের ঘরবাড়ি দোকানপাট তৈরি এবং সরকারি বেসরকারি সবধরনের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এসব ভাটার ইট দিয়ে। কিন্তু এখন এই ইটভাটাগুলো উচ্ছেদের নামে ধ্বংস করা হলে সেখানে কর্মরত অন্তত ২০ হাজার শ্রমজীবি মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকার হয়ে পড়বে।
পাশাপাশি ইটভাটায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে ইটের অভাবে মানুষের ঘরবাড়ি দোকানপাট নির্মাণ এবং সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, পরিবেশের ক্ষতিসাধনের অজুহাতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) ও ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশেনার প্রেক্ষিতে বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথভাবে এ অভিযানে নেমেছে।
তবে ইটভাটা মালিকরা দাবি করেছেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সারাদেশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিতে মন্ত্রী পরিষদ সচিব ড.শেখ আব্দুর রশীদের কাছে একটি পত্র দিয়েছেন। সেখানে উপদেষ্টা অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ড্রাম চিমনি ও ১২০ ফুটের ফিক্সড চিমনির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশনা দেন। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ১৬ নভেম্বর চকরিয়া উপজেলার মানিকপুরের তিনটি পরিবেশবান্ধব ঝিকঝাক চিমনির ইটভাটা এবং গতমাসে ফাইতংয়ের তিনটি ঝিকঝাক চিমনির ইটভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশনা মতে, ড্রাম চিমনি ও ফিক্সড চিমনিতে কোনো অভিযান করেনি।
এ অবস্থায় চকরিয়ার মানিকপুর ও ফাইতংয়ের হাজার হাজার ইটভাটা শ্রমিকরা তাদের কর্মসংস্থান ধ্বংসের বিরুদ্ধে এখন থেকে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন বলে রোববারের মানববন্ধন বিক্ষোভ কাফনের কাপড় করে জানানো প্রতিবাদ কর্মসুচি থেকে ঘোষণা দেন।





