👤 ডেস্ক রিপোর্ট
জাতীয় দলের সতীর্থরা যখন সাজঘরে বিশ্রাম নিচ্ছেন, মুশফিকুর রহিম তখন ভিউইং এরেনার সামনে প্যাড-গ্লাভস গোছাচ্ছিলেন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে এই কাজগুলো নিজের হাতেই করছেন তিনি। নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করাতে ভালো লাগে না তাঁর। হোস্টেল জীবন থেকে হোটেলবাস এবং ক্রিকেটের সাজঘরের একজন পরিপাটি মানুষ মুশফিক। খাওয়া, বিশ্রাম, আড্ডাতে পরিমিতিবোধ প্রখর।
এই সবকিছুর মেলবন্ধনে একজন সুশৃঙ্খল ক্রিকেটার তিনি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ শুরু হওয়া ঢাকা টেস্টের কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকবেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। কারণ, বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার টেস্ট মুশফিকের শততম ম্যাচ। তাই সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় টেস্টের পাদপ্রদীপের সব আলো কেড়ে নেবেন তিনি।
এই সিরিজ শুরুর আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন মুশফিক। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটারের মাইলফলককে স্মরণীয় করে রাখতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি পরিকল্পিতভাবে মিরপুরে রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক কথায় মুশফিককে ঘিরেই সব আয়োজন। রোমাঞ্চকর এই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে মুশফিক নিজেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন।
গতকাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে ফ্রেমবন্দি হন। নিজের মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে কাছে-দূরের সবার থেকে অভিনন্দিত হচ্ছেন মুশফিক। দেশ-বিদেশ থেকে সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাঁর জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান সতীর্থরা। উদ্বোধনী দিনে স্টেডিয়ামের ক্যাপ্টেন্স বক্সে বসে মুশফিকের ম্যাচ উপভোগ করতে চান জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। ২০০৫ সালে লর্ডসে মুশফিকের অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। টেস্টের অভিষেকে ব্যাগি গ্রিন ক্যাপটি নিজের অধিনায়কের হাত থেকেই নিয়েছিলেন ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’। সেই ক্যাপটি ২০ বছরে রং হারালেও টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে মুশফিকের আবেগ একটুও ফিকে হয়নি। টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামলে এই ৩৮ বছর বয়সে তরুণের চেয়েও তরুণ হয়ে ওঠেন তিনি। তাই তো টি২০, ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও খেলছেন টেস্ট।
টেস্ট ক্রিকেটের দেড়শ বছরের ইতিহাসে ৮৩ জন ক্রিকেটার ১০০ ম্যাচ খেলেছেন। এই এলিট ক্লাবের ৮৪তম সদস্য হবেন মুশফিক। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে মাইফলকটি স্পর্শ করবেন তিনি। টাইগার প্রধান কোচ ফিল সিমন্স এই রেকর্ডে খুশি, ‘আমি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে মুশফিককে বলেছিলাম, এই সময়, তুমি যা কিছু করছ তা উপভোগ কর। প্রতিটি দিন, প্রতিটি টেস্ট ম্যাচ উপভোগ কর।’
এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের নিবেদন নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন কোচ, ‘আমি মনে করি প্রথমত, আমাদের তার পেশাদারিত্ব আর শুধু বাংলাদেশের জন্য ক্রিকেট খেলার ইচ্ছাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। কারণ ১০০টি টেস্ট ম্যাচ খেলতে হলে, বাংলাদেশকে বছরে ১৫টি ম্যাচ খেলতে হতো। সেটি না হওয়ায় একটি লম্বা সময় লেগেছে।’
মুশফিকের ক্যারিয়ারে এমনও বছর (২০১২ ও ২০১৬) গেছে মাত্র দুই টেস্টের সিরিজ খেলেছেন। বুঝতেই পারেন নিবেদন, একাগ্রতা ও ধৈর্যের গভীরতা কত মজবুত হলে ১০০ টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারছেন মুশফিক।