👤 নিজস্ব প্রতিবেদক,চকরিয়া
আবদুল হাকিম, আবদু রহমান বাবুল দুইজন আপন সহোদর। কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড পুকুরিয়া গ্রামের মরহুম হাজী আবদু শুক্কুরের ছেলে তারা। দুই ভাইয়ের মধ্যে জমিজমা বন্টন ও আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধের ছিল। একজন অপরজনকে ঘায়েল করতে গোপনে ও প্রকাশ্যে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছিলেন। যাচ্ছিলেন সংঘাতের পথে।
এমন পরিস্থিতিতে পরিচিতজন হওয়ার সুবাদে দুই ভাইয়ের বিরোধ মিমাংসা করতে এগিয়ে আসেন একই এলাকার বাসিন্দা মৃত আহমদ হোছাইনের ছেলে ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। এরপর তিনি বৈঠক করেন বিরোধে জড়িয়ে পড়া দুই ভাইয়ের সঙ্গে।
মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে আবদু রহমান বাবুল শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পক্ষে থাকলেও আবদুল হাকিম নাছোড়বান্দা। তার দাবি, আগে খালি স্ট্যাম্প ও সঙ্গে ব্যাংক চেক জামানত দিতে হবে। নিরুপায় হয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহযোগিতায় এগিয়ে আসা মিজানুর রহমান তার নামীয় ইসলামী ব্যাংক চকরিয়া চিরিংগা শাখার একটি খালি চেক এবং আবদু রহমান বাবুলের কাছে একটি খালি স্ট্যাম্প নিয়ে দেন আবদুল হাকিমকে।
বৈঠকের মাধ্যমে অবশ্য দুই ভাইয়ের বিরোধ মিটিয়ে দেন মিজানুর রহমান। এরপর আবদুল হাকিম তার পাওনা বুঝে পেয়ে ভাই আবদু রহমান বাবুলের স্ট্যাম্প ফেরত দিলেও বিরোধ নিষ্পত্তিকারী মিজানুর রহমানের দেওয়া ব্যাংকের চেকটি ফেরত দেননি।
মিজানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমি দুই ভাইয়ের বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা করেছি মাত্র। এক ভাইয়ের পক্ষ হয়ে আমার নিজের নামীয় ইসলামী ব্যাংকের একটি খালি চেক দিই। ওই চেকটি ফেরত না দিয়ে প্রতারণা করেন আবদুল হাকিম। চেকের শিরোভাগে ১০ লাখ টাকা লিখে ব্যাংক কতৃক ডিজঅনার দেখিয়ে আমার নিকট আইনগত নোটিশ পাঠায়। যদিও আমি পাইনি। পরে আইনি নোটিশের জবার পাওয়া যাইনি দেখিয়ে ব্যবসায়িক লেনদেনের অজুহাত তুলে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে আবদুল হাকিম।
ভুক্তভোগী বিবাদী মিজানুর রহমানের আইনজীবী চকরিয়া চৌকি আদালতের অ্যাডভোকেট রাজিব মাহমুদ বলেন, নালিশী মামলার এজাহারে বাদী আবদুল হাকিম বলেছেন, আসামি মিজানুর রহমান জিম্মাদার (বিরোধ নিষ্পত্তি কল্পে নিজ থেকে) হিসেবে ব্যাংকের চেকটি দিয়েছেন। কিন্তু মামলার সাক্ষ্য প্রদানের সময় বলেছেন, বিবাদী (মিজান) ব্যবসায়ীক লেনদেন বাবদ চেকটি দেন। একইভাবে মামলার স্বাক্ষী নুরুল হক এজাহারে বলেন একধরনের, আদালতে স্বাক্ষী দিয়ে বলেছেন, আসামির সহিত বাদীর লেনদেন নেই। অপর একজন স্বাক্ষী বলেছেন, আসামির সঙ্গে বাদীর কোনো ব্যবসায়িক লেনদেন নেই। দুই ভাইয়ের বিরোধের জেরে বাদীর নিকট চেকটি দেওয়া হয়। সেখানে আসামি মিজান কোনো অঙ্গীকারনামার পক্ষে ছিলো না।
আইনজীবী রাজিব মাহমুদ বলেন, মামলাটি (এসটি মামলা নং ১১২০/২০২৩) চকরিয়া চৌকি আদালত থেকে কক্সবাজার যুগ্ম দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে ন্যস্ত হলে আমরা আসামিপক্ষে লিখিত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এতে বাদী কতৃক মামলাটি রুজু করতে নানাধরণের কুটচালের আশ্রয় নেওয়া, মামলার এজাহারের বিপক্ষে স্বাক্ষী দেয়ার সময় ভিন্ন বক্তব্য দেওয়া এবং মামলার স্বাক্ষী কতৃক ব্যাংক চেকের বিষয়ে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার বিষয়গুলো আদালতের নজরে আনা হয়।
এ অবস্থায় মামলার এজাহার, বাদী, স্বাক্ষীদের বক্তব্য ও যাবতীয় নথিপত্র পর্যালোচনা করে গত ১৮ নভেম্বর ধার্য তারিখে কক্সবাজারের যুগ্ম জেলা দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আবুল মনসুর ছিদ্দিকী মামলাটির চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে মিথ্যা চেকের মামলায় আসামি মিজানুর রহমানকে খালাস দিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট রাজিব মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্র পক্ষের দুইজন সাক্ষী ও আসামি পক্ষের চারজন সাক্ষী গৃহীত হওয়ার পর যুক্তিতর্ক শেষে বিজ্ঞ আদালতে আসামি মিজানুর রহমান নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে দীর্ঘ তিনবছর পর এই সাজানো মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
মিজানুর রহমান বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে তিনবছর অযথা হয়রানি করেছে আব্দুল হাকিম। এতদিন জানতাম সে একজন নামাজি পরহেজগার মানুষ। কিন্তু আমি তারা দুই ভাইয়ের বিরোধ নিষ্পত্তিতে উপকার করতে গিয়ে আবদুল হাকিমের চরিত্র দেখে বুঝলাম সে আসলে একজন লেবাসধারী।