Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

চকরিয়ায় কৃষি জমি কেটে টপসয়েল বিক্রি ও মৎস্য ঘের-পুকুর খনন করলে জেল জরিমানা

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা খাদ্য উৎপাদনে একটি স্বনির্ভর জনপদ। প্রতিবছর উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় অন্তত ৪৫ হাজার একর জমিতে আমন, বোরো ও আউশধান চাষাবাদ হয়ে থাকে। পাশাপাশি ২৫ হাজার একর জমিতে রবিশস্য মৌসুমে রকমারি সবজি চাষ করছেন প্রান্তিক জনপদের কৃষকেরা।

কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান মতে, প্রতিবছর চকরিয়া উপজেলা থেকে আমন বোরো ও আউশধান মিলিয়ে লক্ষাধিক মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হচ্ছে। একইভাবে রবিশস্য মৌসুমে কৃষকেরা দুইশত কোটি টাকার বেশি রকমারি সবজি উৎপাদন করছেন। সবমিলিয়ে চকরিয়া উপজেলা খাদ্য উৎপাদনে প্রতিবছর রেকর্ড অতিক্রম করে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকবছর ধরে কতিপয় চক্র কৃষি জমি কেটে টপসয়েল বিক্রিতে জড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বেশকটি ইউনিয়নে ফসলি জমি কেটে তৈরি করা হচ্ছে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের। এ অবস্থায় প্রতিবছর কমে যাচ্ছে কৃষি জমির পরিমাণ। এতে করে উপজেলাজুড়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে।

কৃষিজমি কেটে মাটি লুটের মহোৎসব ঠেকাতে এবার নড়েচড়ে বসেছেন চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধভাবে কৃষি জমি কেটে ঘের-পুকুর খনন প্রতিরোধ বিষয়ক এক সচেতনতা সভা হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ারুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় প্রধান অতিথি থেকে বক্তব্য দেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।

সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুপায়ন দেব, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহনাজ ফেরদৌসী, চকরিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার। এছাড়াও সভায় বক্তব্য দেন মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শোয়াইবুল ইসলাম সবুজ, ব্যবসায়ী নুরুল আজিম।
এসময় সভায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মৎস্যচাষীরা উপস্থিত থেকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

সভায় বলা হয়েছে, চকরিয়া উপজেলা উপকূলীয় অঞ্চলের বদরখালী, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, পশ্চিম বড়ভেওলা ও বিএমচর ইউনিয়নে কয়েকবছর ধরে কৃষিজমি কেটে মাছের ঘের তৈরি করা হচ্ছে। একইভাবে উপজেলার বরইতলী, হারবাং ইউনিয়নে কৃষিজমি কেটে টপসয়েল বিক্রির ধুম পড়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ইউএনও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, এখন থেকে চকরিয়া উপজেলার কোথাও তিন ফসলি কৃষি জমি কেটে অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য ঘের ও পুকুর করা যাবে না। কারণ কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। টপসয়েল তুলে নেয়ার কারণে ওই জমি উর্বরতা শক্তি হারায়। ফলে সেই জমিতে চাষাবাদ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফসল উৎপাদন হয় না। তাই কৃষিনির্ভর জনপদ চকরিয়া উপজেলার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে আগে কৃষিজমির সুরক্ষা করতে হবে।

তিনি বলেন, কৃষিজমি কেটে টপসয়েল (মাটি) লুট ও পুকুর খননের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে বাধানিষেধ রয়েছে। তাই এখন থেকে কৃষিজমি হ্রাস বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে জেল জরিমানা করা হবে।
কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইনে অনূর্ধ্ব ৫ বছরের সাজা ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষিজমি কেটে মাছের ঘের তৈরি ও একইভাবে পুকুর, জলাশয় ভরাট করা যাবে না। এ সংক্রান্ত আইনও রয়েছে।
এসব অপরাধ বিষয়ে স্থানীয় জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে। তখন কৃর্ষি জমি রক্ষা পাবে।

সভায় অবশ্য চকরিয়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আনোয়ারুল আমিন বলেন, যেসব এলাকায় কৃষিজমিতে চাষ হচ্ছে না, মাটির উর্বরতা শক্তি কমে গেছে, চাষীরা চাইলে বিকল্প চাষ হিসেবে সেখানে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। সেবিষয়ে তিনি সভায় মতামত তুলে ধরেন।

0Shares