👤 নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া
কক্সবাজারের চকরিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আলী আহমদের লাথির আঘাতে তার আপন চাচা মোহাম্মদ কালু (৮৫) নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ আলী আহমদকে আটক করলে ক্ষুব্ধ আত্মীয়রা পুলিশের ভ্যান থেকে তাকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে ব্যাপক মারধর করে। স্বামীকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে তার স্ত্রী পারভীন আক্তার বানুকেও মারধরের শিকার হতে হয়। এ সময় আলী আহমদের ঘরে ঢুকে আসবাবপত্রসহ ঘেরা-বেড়ায় ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্ধ আত্মীয়রা।
বুধবার, ২৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের পুলেরছড়া এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ওসি তৌহিদুল আনোয়ার। তিনি জানান, ‘নিহত পরিবারের বরাত দিয়ে জানা গেছে—সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মোহাম্মদ কালু তার ছেলেদের নিয়ে বিরোধীয় জমিতে চাষ করতে যান। ঠিক তখনই ভাতিজা আলী আহমদ ঘটনাস্থলে এসে বৃদ্ধ কালুর বুকে দু’বার লাথি মারেন। এতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলে ইউনিয়ন ক্লিনিকের চিকিৎসক মোহাম্মদ হাসান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘খবর পেয়ে চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার অভিজিৎ দাসসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু পুলিশ ভ্যান শাহ উমরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় পৌঁছানোর আগেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কয়েকশো স্থানীয় মানুষের সহায়তায় আলী আহমদকে আটক করে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে থানায় নেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। তার স্ত্রী পারভীন আক্তার বানুকেও মারধরের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’
নিহত মোহাম্মদ কালুর ছেলে সরওয়ার আলম ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তাদের তিন কানি (১২০ শতক) জমি গত ২০ বছর ধরে জালিয়াতির মাধ্যমে ভোগ করে আসছিল তাদের জ্যাটাতো ভাই আলী আহমদ। সম্প্রতি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক কানি (৪০ শতক) জমির ডিগ্রি নিজেদের অনুকূলে আসে। এরপরও আদালতের রায় অনুযায়ী জমি বুঝিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় আলী আহমদ। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশি বৈঠকের প্রস্তাব দিলেও তাতে রাজি হয়নি সে।
তারা আরও জানান, বুধবার সকালে তাঁদের বাবা জমিতে চাষ করতে যাওয়ার কথা বললে মনে হয়েছিল, হয়তো এভাবে আলী আহমদ আপোষে বসবেন। কিন্তু জমিতে পৌঁছানোর পরই আলী আহমদ দৌড়ে এসে বৃদ্ধ কালুর বুকে লাথি মারলে তিনি মাটিতে পড়ে যান এবং তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এসএমচর স্টেশন এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও আটক আলী আহমদকে ভ্যানে ওঠানোর মুহূর্তে নিহত কালুর আত্মীয় নারীরা চড়াও হন এবং তাকে টেনে নামিয়ে বেদম মারধর করেন। ইটের আঘাতে তার মাথায় গুরুতর জখম হয়। স্ত্রী পারভীন আক্তার বানু স্বামীকে বাঁচাতে গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করা হয়।
ঘটনার পর ক্ষুব্ধ আত্মীয়রা আলী আহমদের ঘরে ঢুকে আসবাবপত্র ও ঘেরা-বেরা ভাঙচুর করে। পরে নিহত কালুর ছেলেরা পরিস্থিতি আরও অবনতির আগেই আত্মীয়দের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেন। দুপুর ২ টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে চকরিয়া থানা পুলিশ।