
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ ও গুণগত উৎপাদন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে হলে মৎস্য চাষে গুড অ্যাকুয়াকালচার প্র্যাকটিস অনুসরণ এবং অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বাগদা চিংড়ি রপ্তানিতে ঝুঁকির মুখে পড়বে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিংড়িজোনের বদরখালী ইউনিয়নের রামপুর মৌজায় অবস্থিত ৪৮ একর আয়তনের প্রদর্শনী চিংড়ি খামারে সরকারি চিংড়ি এস্টেটের ইজারাগ্রহীতা ও চিংড়ি চাষীদের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, বাগদা চিংড়ি বাংলাদেশের একটি বিশেষ পরিচয় বহন করে। তাই এই সুনাম রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। চিংড়ি চাষের সঙ্গে ম্যানগ্রোভ বা প্যারাবন সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার চিংড়ি চাষিদের নিরাপত্তা, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়ের আশ্বাস দিয়ে বলেন, সরকার ও চাষিদের যৌথ প্রচেষ্টায় বাগদা চিংড়িকে দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিণত করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ জিয়া হায়দার চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. হেমায়েত হোসেন, যুগ্ম সচিব ড. আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর, মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন, কক্সবাজার চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ অঞ্চলের উপপরিচালক অধীর চন্দ্র দাস, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শাহীন দেলোয়ার, চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার মোঃ আনোয়ারুল আমিন, এনজিও সংস্থা উবিনীগ কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন খান, বদরখালী ভার্চু স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মহিউদ্দিন কাদের অদুল প্রমুখ।
এছাড়াও চকরিয়া চিংড়ি এস্টেটের বিভিন্ন প্রকল্পের ইজারা গ্রহীতা, মৎস্যচাষি, মৎস্যজীবী এবং স্থানীয় জনগণ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া সাংবাদিক মহিউদ্দিন কাদের অদুল বলেন, চকরিয়া চিংড়িজোনে নিরাপদ মৎস্য চাষ নিশ্চিতে চিংড়ি ঘের এলাকায় বেড়িবাঁধের আধ-কিলোমিটার পর পর পার্কিং স্পেস তৈরি, প্রয়োজনীয় স্লুইসগেট নির্মাণ, ম্যানগ্রোভ বনায়ন সৃজন ও রক্ষাণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাণবৈচিত্র্যপূর্ণ দুর্যোগ প্রতিরোধী পর্যটনস্পট গড়ে তোলা এবং জেটিঘাট ও ব্রীজ নির্মাণের বিষয়সমূহ উপদেষ্টার কাছে উত্থাপন করা হয়।
প্রসঙ্গতঃ কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার রামপুর মৌজায় অবস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরাধীন ৭ হাজার ২১.৭৬ একর আয়তনের চিংড়ি এস্টেটটি পর্যায়ক্রমে মৎস্য অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে ১৯৭৮ সালে ৫,০০০ একর এবং ১৯৮২ সালে ২,০২১.৭৬ একর জমি কৃষি ও বন মন্ত্রণালয় হতে হস্তান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৫–৮৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ)-এর অর্থায়নে চিংড়ি চাষ প্রকল্পের আওতায় ৫,০০০ একর জমি ১০ একর বিশিষ্ট ৪৬৮টি প্লটে এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর অর্থায়নে মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২,০২১.৭৬ একর জমি ১১৯টি প্লটে বিভাজন ও উন্নয়ন করা হয়। বর্তমানে এসব চিংড়ি প্লট ২০ বছর মেয়াদে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট ইজারা ও নবায়নের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
মতবিনিময় সভার পূর্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ মগনামা পাড়া ৬নং ওয়ার্ডে অবস্থিত শিখি পড়ি বিদ্যালয় পরিদর্শন ও স্থানীয় লোকজনর সাথে মতবিনিময় করেন।




