Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পেকুয়ায় অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দুইপক্ষের গোলাগুলি, আহত ৭

কক্সবাজারের পেকুয়ায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে সাতজন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেও একজন নারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ও বিকেল সাড়ে চারটার দিকে দুই দফায় উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পেকুয়া বাজারে এই ঘটনা ঘটে।

আহতেরা হলেন পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ভোলাইয়াঘোনা এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে শওকত হোসেন (৩৮), মিয়াপাড়া এলাকার নুরুল হোসেনের ছেলে মোজাম্মেল হোসেন (৩০), বটতলীয়া পাড়ার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. নয়ন (২২), মাতবরপাড়া এলাকার সিরাজ মিয়ার ছেলে নেজাম উদ্দিন (৩৫), গোঁয়াখালী এলাকার আনছার উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ ফোরকান (২৩), একই এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম (২৭) ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের কুতুবপাড়া এলাকার আহমদ মিয়ার মেয়ে আমেনা বেগম (৩৫)। এরমধ্যে আমেনা বেগম পথচারী।

পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমেনা বেগম ও মোজাম্মেলন হোসেন ছাড়া অন্য পাঁচজনের শরীরে ছরররা গুলি লেগেছে। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

অটোরিকশা শ্রমিকেরা বলেন, গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে পেকুয়া উপজেলার ১১টি অটোরিকশা স্ট্যান্ড নিয়ে দখল-বেদখল চলছে। পেকুয়া উপজেলার সবকটি সড়কে কক্সবাজার জেলা অটোরিকশা, টেম্পু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, পেকুয়া শাখার আওতাধীন হাজার খানেক সিএনজি অটোরিকশা আছে। এই সংগঠনটির নেতৃত্বে আছেন সভাপতি হিসেবে নাছির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোহাম্মদ বারেক। তাঁদের মধ্যে নাছির রাজাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বারেক পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশ অটোরিকশা সিএনজি শ্রমিকলীগ নামের একটি সংগঠন অটোরিকশা স্ট্যান্ডগুলো দখল করে নিতে তৎপর হয়ে উঠে। এই সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে আছেন রফিক আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন রফিকুল ইসলাম। একমাস আগে থেকে পেকুয়ার বিভিন্ন সড়কে নাছির ও বারেকের নিয়োগ করা লাইনম্যানদের মারধর করে অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখল করে নিতে শুরু করে অটোরিকশা সিএনজি শ্রমিক লীগ। এরপর পেকুয়া বাজার এলাকায় উজানটিয়া ও মগনামা অটোরিকশা স্ট্যান্ডে হারুনর রশিদ নামের একজনকে লাইনম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। স্ট্যান্ড দখল-বেদখল নিয়ে মারামারির পর দুই পক্ষ পেকুয়ার বিভিন্ন সড়কে কয়েকদফা মিছিল-সমাবেশ করে। অটোরিকশা সিএনজি শ্রমিকলীগের পক্ষে পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. আজমগীরকে সরব হতে দেখা গেছে। তিনি পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের ছোটভাই।

প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা বলেন, আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে অটোরিকশা, টেম্পু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন পেকুয়াবাজারের উজানটিয়া ও মগনামা অটোরিকশা স্ট্যান্ডের লাইনম্যান হারুনুর রশিদকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর দুই পক্ষের উত্তেজনায় পেকুয়া বাজারের অন্তত দুই শতাধিক দোকান বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল চারটার দিকে অটোরিকশা সিএনজি শ্রমিকলীগের লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল বিনিময় হয়। একপর্যায়ে গোলাগুলি হলে ছররাগুলিতে পাঁচজন আহত হন। ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন এক নারীসহ দুইজন। ঘটনার পর থেকে অটোরিকশা স্ট্যান্ডগুলোতে উত্তেজনা চলছে।

জানতে চাইলে অটোরিকশা, টেম্পু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়েনের পেকুয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বারেক বলেন, তাঁদের সংগঠন শ্রম অধিদপ্তরের অধিভুক্ত। পেকুয়া সৃষ্টির আগে থেকে এই সংগঠনের কার্যক্রম চলছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে অটোরিকশা সিএনজি শ্রমিকলীগ নাম দিয়ে কিছু ব্যক্তি লাইন দখলের চেষ্টা করছে। গুলিতে তাঁর আটজন পরিবহন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে। তবে তিনি ঢাকা অবস্থান করায় তাঁদের নাম বলতে পারেননি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ অটোরিকশা সিএনজি শ্রমিকলীগ পেকুয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে তাঁর সংগঠনের অনুমোদন রয়েছে। এখন থেকে লাইন তাঁরাই পরিচালনা করবেন। তিনি বলেন, তাঁর প্রতিপক্ষ সংগঠনটির পেকুয়ার কমিটি মেয়াদোর্ত্তীণ হয়ে গেছে। তাঁরা এখন লাইন পরিচালনার যোগ্য নন।

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দখল-বেদখল নিয়ে দুটি শ্রমিক সংগঠনের লোকজনের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এছাড়া অন্যকিছু বিষয়ও আছে। তবে তিনি গোলাগুলির বিষয়টি ‘ভুয়া কথা’ উল্লেখ করে বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কেউ গোলাগুলির ব্যাপারটি বলেনি। গুলিতে কেউ আহত হয়েছে এ খবরও আমাদের কাছে নেই। দুইপক্ষের মধ্যে ইট, কংকর মারামারি হয়েছে। এতে কয়েকজন সামান্য আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন।

0Shares