মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন করা না হলে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে সোয়া পাঁচটার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন হুমকি দেন তিনি।
চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা যখন ন্যায় দাবির পক্ষে মাঠে আওয়াজ তুলেছে তখন বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল ব্যানার নিয়ে রাজপথে নামার সাহস করেনি। একমাত্র আমরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জানের ঝুঁকি নিয়ে, হামলা-মামলার ঝুঁকি নিয়ে, বিভিন্ন বিপদ সামনে রেখে ন্যায়ের পক্ষে রাজপথে খুনীর বিরুদ্ধে, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে, টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলাম। ওদেরকে বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়েছি। এতো জান, এতো রক্ত, এতো মায়ের বুক খালী হলো। এখনো মায়েদের কান্না বন্ধ হয় নাই। এখনও মুগ্ধের সেই পানি পানি শব্দ বন্ধ হয় নাই। কিন্তু এই লাশের ওপর দাঁড়িয়ে, এই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যাঁরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে রয়েছে তাঁরা আমাদের সঙ্গে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে, ধোকাবাজি করছে-সহ্য করা হবে না। আজকে তাঁরা তামাশা মনে করে যাকে তাকে উপদেষ্টা বানায়। বিভিন্ন কায়দায় তাঁরা আজকে বাংলাদেশে সম্পূর্ণ অশান্তি তৈরি করার জন্য এই ফারুকী, যে ফারুকীর সংস্কৃতি সম্পূর্ণ পশুত্ব সংস্কৃতি। সে ফারুকীকে যদি বাংলাদেশের মধ্যে উপদেষ্টা বানানো হয় তাহলে আমাদের রক্ত, আমাদের জান, আমাদের সমস্ত শ্রম আজকে তাঁরা পরাজিত করবে। হতে দেওয়া হবে না। এখনই পরিবর্তন করতে হবে। নইলে আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।’
চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমরা রাস্তায় এসেছি এদেশের কল্যানের জন্যে, ইসলামের কল্যাণের জন্যে, মানবতার কল্যানের জন্যে। সেখানে আপনারা বসে ক্ষমতার মসনদে তামাশা করবেন আর আমরা বসে বসে দেখব এটা কখনও হতে দেব না। হতে দেওয়া যায় না। আর আপনারা যদি অশান্তি তৈরি করেন তাহলে দেশের ভেতরে যে দোসররা ১৫, সাড়ে ১৫-১৬ বছর দেশের সব জায়গায় ওদের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে যে সমস্ত দুর্নীতিবাজদের বসিয়েছিল এবং যে সমস্ত সংস্থাগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন সেগুলোতে আপনারা হাত না দিয়ে এখনই জনগনের ভেতরে বিশৃঙ্খলা শুরু করছেন, এ ধরণের বিতর্কিত উপদেষ্টা আপনারা ওখানে বসিয়েছেন। এটা কখনও হয়! এটা হতে দেয়া যায় না। এটা আমরা সহ্য করি না এবং সহ্য করবো না। এই প্রতিবাদ আমরা করবোই। আপনারা জেনে রাখেন, আমরা আবার যদি রাস্তায় আসি আল্লাহ ভালো জানেন কী হবে, আমি জানি না। তবে একটা অশান্তির পরিবেশ আপনাদের জন্য তৈরি হবে। এটা আমরা চাই না। এ ধরণের কাজ করবেন না।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম জামায়াত ও বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে জামায়াতের আমীর বক্তব্য রাখে, আওয়ামী লীগকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। আপনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার কে? আপনি কে, আপনি সন্তান হারিয়েছেন যে, আপনি ক্ষমা করে দেবেন? আবার বিএনপি থেকে শুনছি যে আপনারা তাদেরকে নির্বাচনে আসার ব্যাপারে আহ্বান জানাচ্ছেন। আপনাদের ধিক্কার জানাই। আপনাদের দল করে অনেক মায়ের বুক খালী হয়েছে। হাজার হাজার বিএনপির লোক, তাঁদের সংসার বিলীন হয়ে গেছে। আজকে আপনারা তাদেরকে আহ্বান করছেন যে, আপনারা আসেন নির্বাচন এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্যে। আপনারা বরং যাঁরা দুর্নীতি করেছে, খুন করেছে, গুম করেছে, টাকা পাচার করেছে এদের বিচার এবং এদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার ব্যাপারে কাজ করেন। কারণ এরা নির্বাচন করতে পারবে না। সারা বাংলাদেশে তিনটা নির্বাচনে আমাদের জনগণকে ধোকা দেয় নাই? দিনের ভোট রাতে করে নাই? আমাদের ধোকা দিয়ে নির্বাচনে নিয়ে এসে ভোট বাক্স ভরে আমাদের ধোকা দেয় নাই? অন্তত তিন জাতীয় নির্বাচন তাঁরা বাইরে থাকুক। তারপর আসতে পারে বিচার হওয়ার পরে। সাধারণ মানুষ আর কোনো ধোকাবাজকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আজকে জনগণ ইসলামকে ক্ষমতার মসনদে দেখতে চায়। আমরা ইসলামী দলগুলো একত্রিত হয়ে অন্তত একটি বাক্স যেন ইসলামের পক্ষে পাঠাতে পারি এই চেষ্টা আমি করছি।’
আওয়ামী লীগ ১১ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে দাবী করে চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছরে শুধু চুরি করেছে তা নয়, তামাম দুনিয়ার মধ্যে একবার নয়, দুইবার নয় পাঁচবার চুরির দিক থেকে ফার্স্ট হয়েছে। এটা বিএনপির সময়ে হয়েছে, আওয়ামী লীগের সময়ে হয়েছে। আপনারা জানেন খুনী এবং ফ্যাসিস্ট যাঁরা কিছুদিন আগে পালিয়েছে তাঁরা বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় বেগম পাড়া তৈরি করেছে। ১১ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে বিভিন্ন দেশে সম্পদের পাহাড় করেছে। আজকে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মাথাপিছু ঋণ দেড় লাখ টাকার ওপরে। টিআইবি নামে একটি সংস্থা একশ এমপি-মন্ত্রীর ভেতরে জরিপ করেছিল। তারা তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেছে, একশ-এমপি মন্ত্রীর মধ্যে ৯৭জন চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত। বাকি তিনজনও চোর, তবে তাঁরা কম চোর। যাঁরা আমার দেশের সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে তারা অভাবী চোর নাকি স্বভাবী চোর? এই স্বভাবী চোরদের দুয়েকটা হাত কাটা দরকার আছে না নাই? যদি একটা স্বভাবী চোরের একখানি হাত কাটেন তাহলে বাংলাদেশ চোর মুক্ত।’
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে শান্তি আসে নাই, লেলিন-কার্ল মার্কস-মাও সেতুং এর মাধ্যমে শান্তি আসে নাই, প্রচলিত গণতন্ত্রের মাধ্যমে শান্তি আসতে পারে না। এটার প্রবক্তা আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। তিনি বলেছেন, সমস্ত ক্ষমতার মালিক জনগণ। এই নীতি আর্দশ বিএনপি লালন করে, জাতীয় পার্টি লালন করত, আওয়ামী লীগও করত। সাথে ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। তামাম বিশ্বের ভেতরে সবচেয়ে বড় অশান্তি আমি বলব আমেরিকা। কারণ দুনিয়ার মধ্যে আত্মহত্যা সবচেয়ে বেশি আমেরিকায়। আত্মহত্যার পথ যাঁদের ঈমান নেই তাঁরা বেছে নেয়, বিশেষ করে যখন অশান্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তাহলে সবচেয়ে আত্মহত্যা যে দেশে হলো, ঐ দেশের নীতি-আর্দশে শান্তি আসলো? বরং ওদের নীতি-আর্দশের মাধ্যমে আজকে তামাম দুনিয়ার মধ্যে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বালাচ্ছে। আজকে ফিলিস্তিনের মধ্যে যেভাবে মুসলমানকে, আমার মা-বোনকে, ছোট ছোট বাচ্চাকে নির্মমভাবে হত্যা করছে এটা কোনো আদর্শ হতে পারে না। এটা কোনো মানবতা হতে পারে না। এটা শুয়োরের নীতি। এটা কুত্তা নীতি। তাহলে এই নীতি -আর্দশের মাধ্যমে কখনো শান্তি আসতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমরা বারবার আওয়ামী লীগকে উঠিয়েছি, বিএনপি নামিয়েছি। বিএনপিকে উঠিয়েছি, আওয়ামী লীগ নামিয়েছি। এভাবে ৫৩ বছরে আমরা শান্তি তো পাই নাই। বরং দিনকে দিন অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এখন এই পরিবর্তনের জন্য, দুনিয়াতে শান্তির জন্য একমাত্র পথ ইসলাম।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, চকরিয়া উপজেলা শাখা আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মুফতি শামসুল হক কাসেমী। এতে বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল বশর আজিজী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, চট্টগ্রাম মহানগর ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি জান্নাতুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সহসভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ শোয়াইব, সেক্রেটারি এ আর এম ফরিদুল আলম।