Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ঈদগাঁওয়ে চলছে পাহাড়-টিলা কাটার মহোৎসব

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ঈদগাঁও-ফুলছড়ি ও মেহেরঘোনা রেঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলছে পাহাড়-টিলা কাটার মহোৎসব। একই ভাবে ঈদগাঁও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটি খেকোরা সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ভেকু দিয়ে নির্বিচারে পাহাড় টিলা কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করছে। এসব পাহাড় কাটার অধিকাংশ মাটি যাচ্ছে এলাকার কৃষি জমি ও জলাশয় ভরাট কাজে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইসলামপুর ইউনিয়নের নাপিতখালী বিটের অধিন ভিলেজারপাড়া এলাকায় পাহাড়, টিলা ও কৃষি জমি কাটা হচ্ছে। এতে প্রশাসন ও বনববিভাগের কোনো অনুমতি নেই। এছাড়া মেহেরঘোনা রেঞ্জের অধীনে চান্দেরঘোনা-কালিরছড়ার অধিকাংশ জায়গা পাহাড়ি এলাকা। এই এলাকায় প্রাকৃতিক ও সামাজিক বনায়নের ছোট-বড় অর্ধশতাধিক টিলা রয়েছে। ওইসব টিলায় স্থানীয় মাটিখেকোদের চোখ পড়েছে। তাঁরা নানা কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাত করে এসব এলাকার প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যের পাহাড় ও টিলা কেটে মাটি বিক্রি ও সরবরাহ করছে। পাহাড়ের লাল মাটি দিয়ে নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে। বিভিন্ন ফসল ও সবজি আবাদের নাম করে কিংবা বাড়িঘর নির্মাণের অজুহাতে ৩০ ফুট উঁচু টিলা কেটে সমতলভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি খেকো লোকজন কৌশলে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুরোদমে পাহাড় ও টিলা কেটে ডাম্প ট্রাকে ভর্তি করে বিভিন্ন স্থানে জলাশয়, কৃষি জমি ভরাট কাজে নিয়ে যায়। এক ডাম্প ট্রাক লাল মাটি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। মাটি খেকোদের কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে।

তবে স্থানীয়রা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে পাহাড় ও টিলা কৃষি জমি থেকে মাটি খেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা নির্বিচারে পাহাড় টিলা কাটে । কৃষি জমির মাটিও কাটেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাটি খেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতারাতি ভোল পাল্টিয়ে কাটছে পাহাড়-টিলা। 

ঈদগাঁও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,  ছোট-বড় লাল মাটির অনেক পাহাড় ও টিলাসহ বন বিভাগের জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে চক্রটি। পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও সামাজিক বনায়নের গাছগুলোও কৌশলে কেটে বিক্রি করেন।

খবর নিয়ে জানা গেছে, মাটি ভর্তি ভারি  ট্রাক চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তা ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক নষ্ট হচ্ছে। কৃষি সুরক্ষা আইন ভঙ্গ করে প্রতি বছর শত শত বিঘা ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে কোথাও না কোথাও ভরাট করা হচ্ছে ফসলি জমি। গড়ে তোলা হচ্ছে বসতবাড়ি- প্রতিষ্ঠান।অনুমতি ছাড়াই জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলছেন। অথচ ভূমি কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন না করায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। 

সম্প্রতি সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, উপজেলার ফকিরাবাজারে কৃষি জমি ভরাট করে বসতবাড়ি নির্মান করা হচ্ছে। এছাড়াও ঈদগাঁও সদর ইউনিয়নের ভোমরিয়াঘোনা, ভাদিতলা, হাসিনাপাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি ভরাট করে পরিবর্তন করা হচ্ছে জমির শ্রেণি। ২০১৬ সালের কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের (খসড়া আইন)-৪ ধারায় বলা রয়েছে, কৃষিজমি ভরাট করতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এই আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে ফসলি জমি ভরাট করা হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রামে ফসলি জমিতে মাটি ভরাট করে বসতভিটা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতি বছরই এভাবে কমছে কৃষিজমি। বছরের পর বছর এই অবস্থা চলে এলেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না ভূমি কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, অনুমতি ছাড়াই যাঁরা পাহাড় টিলা কেটে পরিবেশ নষ্ট করছে তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সোলতানা বলেন, অনুমতি ছাড়া পাহাড়-টিলা কাটলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষি জমি ভরাট বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষিজমি ভরাট করে বসতবাড়ি কিংবা অন্য কিছু করতে হলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। কেউ না নিয়ে থাকলে অপরাধ হবে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হলে অবশ্যই খাজনার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ফসলি জমি ভরাটের খবর পেলেই অভিযান চালানো হবে।

3Shares