পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকায় দানু মিয়া (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে মুবিনুল ইসলাম (৩০) নামের আরেক যুবককে বেদড়ক পেঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দানু মিয়া মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মাহারা পাড়ার মৃত কলমদারের ছেলে। আর আহত মুবিন চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের ছড়াপাড়ার ছাবের আহমদের ছেলে। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর পেকুয়া সদর ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকার মকছুদুল করিম বাচ্চুর ছেলে কলেজছাত্র আসহাবুল করিম জিহাদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। চকরিয়ার কোনাখালী কেন্দ্রিক মোবাইল চক্রের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের ১২ সদস্যের নাম উল্লেখ করে চকরিয়া থানায় একটি মামলা করেন বাচ্চু।
স্থানীয় লোকজন বলেন, জিহাদ হত্যা মামলার ২ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মোবারক আলী, ৬নম্বর দানু মিয়া ও ৯ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মো. মুবিনুল ইসলাম। এরমধ্যে মোবারক আলী জামিনে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন দানু মিয়া ও মুবিনুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনাখালীর ছড়াপাড়া থেকে সিএনজিচালিত দুটি অটোরিকশাযোগে আত্মসমর্পণ করতে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাচ্ছিলেন দানু মিয়া ও মুবিনুল। সঙ্গে ছিলেন জিহাদ হত্যা মামলায় জামিনে থাকা দুই নম্বর আসামি মোবারক আলীও। তিনি দানু মিয়ার মেয়ের জামাই মোহাম্মদ রমিজের মোটরসাইকেলের পেছনে উঠেন। অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল ইদমনি লাল ব্রিজের পাশের মসজিদের সামনে পৌঁছালে অন্তত ১৫-২০জন দুর্বৃত্ত তাঁদের গতিরোধ করেন। তাঁরা একযোগে দানু মিয়া, মুবিনুল ইসলাম ও মোবারক আলীর ওপর হামলা শুরু করে। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা দানু মিয়া ও মুবিনুল ইসলামকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যান। তাঁদের পেকুয়া সদরের একটি অজ্ঞাত স্থানে রেখে দিনভর পেঠানো হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁদের অবস্থা গুরুতর হয়ে গেলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সটি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আহত দানু মিয়া ও মুবিনুল ইসলামকে নিয়ে কোনাখালীর ছড়াপাড়া এলাকায় যায়। এসময় আত্মীয়-স্বজনেরা ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে দানু মিয়াকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে রাত ১০টার দিকে পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় দানু মিয়া মারা যান। মুবিনুল ইসলামকে তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করান।
চকরিয়া থানা পুলি জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে গতিরোধ করে মারধর ও অপহরণের খবর পেয়ে লালব্রিজ এলাকায় যায় পুলিশ। এসময় মোবারক আলীকে উদ্ধার করে চকরিয়া থানায় নেওয়া হয়। পরে আলোচিত জিহাদ হত্যা মামলায় তিনি জামিনে থাকায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
দানু মিয়ার মেয়ের জামাই মো. রমিজ বলেন, তাঁর শ্বশুরের পুরো শরীরে জখমের চিহ্ন। খুব নির্মমভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পেকুয়া সদরের মসজিদের পাশে একটি দোকানে সারাদিন মারধর করলেও কেউ বাঁচাতে এগিয়ে যাননি। তিনি বলেন, দানু মিয়া যদি জিহাদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকে সেটির ফয়সালা আদালতে হবে। কিন্তু এভাবে কাউকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যাওয়ার পথে তুলে নিয়ে দিনভর পিটিয়ে হত্যা করতে পারে না। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মোবারক নামের একজনকে উদ্ধারের পর কোনো মামলায় গ্রেপ্তারি পরওয়ানা না থাকায় ছেড়ে দেয়া হয়রছে। গতকাল রাত একটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে দানু মিয়ার লাশ থানায় আনেন তাঁর পরিবারের লোকজন। যেহেতু হত্যার একটি বিষয় তাই অ্যাম্বুলেন্স ও চালককে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কারা দানু মিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়েছে তা বের করার চেষ্টা চলছে। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে দানু মিয়ার লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন, সিকদার পাড়ায় সংঘটিত ঘটনা সম্পর্কে লোকেমুখে শুনেছি। কেউ আমাদের লিখিত অভিযোগ দেননি।