কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিএনপি নেতা সিরাজ উদ্দিন আহমদকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মামলা রুজু হয়েছে। হামলার ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টানা ২২ দিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে আহত সিরাজ উদ্দিন আহমদ বাদি হয়ে ১২ জানুয়ারি চকরিয়া থানায় মামলাটি রুজু করেছেন।
মামলায় ফাঁসিয়াখালীর আলী আকবরের ছেলে মৌলভী এহেসানকে প্রধান আসামি করে আরও ৯ জনের নাম উল্লেখপূর্বক ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদি সিরাজ উদ্দিন আহমদ ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও দিগরপানখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক।
মামলার এজাহারে বাদি সিরাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজারবিল নয়াপাড়া স্টেশন এলাকায় নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে একজনের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ মিমাংসা করে বাড়ি ফিরছিলাম। ওইসময় পূর্ব থেকে রাস্তার উপর উৎপেতে থাকা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘুনিয়া এলাকার বহুল আলোচিত আলী আকবরের ছেলে মৌলভী এহেসানের নেতৃত্বে তাঁর সহযোগী আবদুল্লাহ, নয়াপাড়ার মিরাজ, জুবায়ের, ভেন্ডিবাজার এলাকার গিয়াস উদ্দিন, জসিম উদ্দিনসহ ২০-২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী জড়ো হয়ে আমার উপর হামলা করে। এসময় তাঁরা আমাকে ধারালো কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম করে।
সিরাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, হামলার ঘটনার পর পরিবার সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তিনি বলেন, টানা ২২ দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে ১২ জানুয়ারি চকরিয়া থানায় হামলাকারী সন্ত্রাসী মৌলভী এহেসান, মিরাজ, গিয়াস উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, আবদুল্লাহ, জুবাইর আহমদ, সরওয়ার আলম, মো. ইউনুছ ও শাহাব উদ্দিনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীকে আসামি করে একটি এজাহার জমা দিই। চকরিয়া থানার ওসি হামলার ঘটনার সত্যতা পেয়ে ওইদিন হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলাটি রুজু করেন। যাহার মামলা নং ৩৩/৩৩)।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পর হঠাৎ ভোল পাল্টিয়ে মৌলভী এহেসানের নেতৃত্বে একটি চক্র ফাঁসিয়াখালীতে নানাভাবে চাঁদাবাজি, দখলবাজী, বালু উত্তোলনসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে চকরিয়া উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ ফাসিয়াখালী ইউনিয়নে অপকর্মে জড়িত এসব দখলবাজদের চিহ্নিত করে এবং দলের সম্মান রক্ষার্থে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দেয়।
বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মৌলভী এহেসানের সহযোগীরা ফাঁসিয়াখালীর সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ও বর্তমান চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিনের পাশে থেকে গোপনে দলের ব্যাপক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও ক্ষতি করে যাচ্ছিলেন। গত ৫ আগষ্ট পরবর্তী বিষয়টি দলের সবার সামনে উম্মেচিত হয়।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মৌলভী এহেসানের পরিবার এলাকায় নানাভাবে বিতর্কিত। তাঁর ভাই ফুয়াদ বাংলাদেশ নামক একটি সংস্থা খুলে চকরিয়া উপজেলার শত শত মানুষের জামানত হিসেবে রাখা অন্তত ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশ পালিয়ে গেছে। তাঁর বাবা আলী আকবর এলাকার নিরীহ পরিবারের জায়গা দখল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়েকবছর আগে আলীকদম উপজেলার আমতলী এলাকায় জায়গা দখলে বাঁধা দেওয়ায় দুইজনকে হত্যা করে এহসানের বাবা আলী আকবর। তাকে আলীকদম থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে ওইসময়। এধরণের অসংখ্য বিতর্কিত অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে মৌলভী এহেসান ও তাঁর পরিবার সদস্যদের বিরুদ্ধে।
মামলা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ফাঁসিয়াখালীতে সিরাজ উদ্দিন আহমদের উপর হামলা চালিয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় এজাহার প্রাপ্তি সাপেক্ষে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ এজাহারনামীয় আসামিদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে।