Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পেকুয়ায় হাত-পা ও মুখ বাঁধা ছবি স্ত্রীকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি

মুক্তিপণের টাকায় কর্জ শোধ করবেন এবং মালয়েশিয়া যাবেন। এমন মনোবাসনা থেকে নিজে অপহরণের নাটক সাজিয়ে পুলিশের কাছে ধরা খেলেন মোহাম্মদ ইদ্রিস (৪২)। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি মৌলভীপাড়া এলাকায়।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রামের শহরের মোহরার বালুর টাল নামক এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে পেকুয়া থানা পুলিশ। পরে রাত আটটার দিকে তাকে পেকুয়া থানায় নেওয়া হয়।

পেকুয়া থানা পুলিশ জানায়, গত ২৪ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে টৈটং বাজার থেকে আত্মগোপনে চলে যান ইদ্রিস। এরপর তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে অপহৃত হওয়ার কথা জানান এবং বলেন, ‘৩০লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। নইলে অপহরণকারীরা তাকে মেরে ফেলবে।’ পরে পরিবারের সদস্যরা দফারফা করে পণমূল্য ৩ লাখ টাকায় নামিয়ে আনেন। বিষয়টি পরিবারের লোকজন পেকুয়া থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ অপহৃত ইদ্রিসকে উদ্ধারে মাঠে নামে। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সাতকানিয়া ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ।একপর্যায়ে লাস্ট কল লোকেশন অনুযায়ী, ইদ্রিসের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন একজনকে চট্টগ্রাম শহর থেকে আটক করে পুলিশ। ওই ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীর ছোটবোনের স্বামী নবী হোছেন। পরে তাকে নিয়ে চট্টগ্রামের মোহরার বালুর টাল এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় ইদ্রিসকে। অপহরণ নাটকের বিষয়টি নবী হোছেনকে জানিয়েছিলেন ইদ্রিস।

গতকাল রাত ১০টার দিকে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফার কক্ষে ইদ্রিস সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন, তিনি আত্মগোপনে চলে গিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন। মানুষ তাঁর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা মতো পাচ্ছে। এই টাকা শোধ করতে এবং মুক্তিপণের টাকা বেশি পেলে ওই টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া যেতে অপহরণের নাটকটি করেছেন।

ইদ্রিস বলেন, ‘ঘটনাটি এতো বড় হবে ভাবিনি। হাত-পা ও মুখ বাঁধা ছবি শুধু স্ত্রীকে পাঠিয়েছিলাম। তারপর তাঁর কাছ থেকে ৩ লাখ মুক্তিপণ দাবী করেছি। কিন্তু তিনি ঘটনাটি অনেক বড় করে ফেলেছেন। এখন আমি অনুতপ্ত।’ ইদ্রিস বলেন, ‘পাঁচ শত টাকায় রশি কিনে ও একজনকে দিয়ে ছবি তুলিয়ে স্ত্রীর কাছে হাত-পা ও মুখ বাঁধা ছবি পাঠিয়েছি।’

ইদ্রিস, পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও স্থানীয় লোকজন বলেন, মূলত আটমাস আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে কর্মহীন হয়ে পড়েন ইদ্রিস। এরমধ্যে ধার কর্জ করে সংসার চালিয়েছেন। পাওনাদাররা যখন টাকার জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেন তখনই যেকোনো উপায়ে তিনি মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ভাইদের কাছ থেকে টাকা খোয়াতে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যান ইদ্রিস। এরপর খুঁটির সঙ্গে নিজের হাত-পা ও মুখ বাঁধা একটি ছবি স্ত্রী কুলসুমা আকতারের কাছে পাঠিয়ে ফোন দেন। ইদ্রিস স্ত্রীকে বলেন, ‘একদল লোক তাকে অপহরণ করেছে। ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করছে। টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। ভাইদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দ্রুত আমাকে মুক্ত করো।’ তখন পরিবারের সদস্যরা দফারফা করে সর্বশেষ পণমূল্য ঠিক হয় তিন লাখ টাকায়।

গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর রাত নয়টার দিকে পেকুয়া চৌমুহনীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে থেকে পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফকে অপহরণ করা হয়। এরপর অপহরণকারীরা হাত-পা ও চোখ-মুখ বাঁধা ছবি পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ৪০লাখ মুক্তিপণ দাবী করে। একপর্যায়ে ১১ অক্টোবর শিক্ষক আরিফের বাড়ির পরিত্যক্ত একটি পুকুর থেকে পায়ে ইট বাঁধা বস্তাবন্দি অবস্থায় আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ যখন ইদ্রিসের হাত-পা ও মুখ বাঁধা ছবিটি দেখে তখন স্বাভাবিকভাবে শিক্ষক আরিফের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে দ্রুত উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে ইদ্রিসের অবস্থান সনাক্ত করি সাতকানিয়ার গভীর জঙ্গল ছনখোলা নামক স্থানে। সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধারে ব্যর্থ হই। পরের দিন আবার তাঁর অবস্থান সনাক্ত করি চট্টগ্রামের মোহরা এলাকার বালুর টালে। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন একজনকে আটক করে তাকে দিয়ে মূলত বালুর টাল এলাকা থেকে ইদ্রিসকে উদ্ধার করা হয়। পরে ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়। ইদ্রিস নিজেই স্বীকার করেন, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা খোয়াতে নিজেই অপহরণের ঘটনা সাজিয়েছেন।

পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বলেন, ‘গত তিন দিনের প্রতিটি মুহুর্ত ইদ্রিসকে জীবিত উদ্ধারের একটি স্পৃহা ছিল। যখন সাতকানিয়ার লোকেশেনে তাকে পাইনি, তখন মনে হয়েছে এই বুঝি ইদ্রিসকে মেরে ফেলেছে অপহরণকারীরা। এখন ইদ্রিসকে উদ্ধার করতে পেরে বুক থেকে একটি বড় পাথর নেমে গেছে বলে মনে হচ্ছে।’

1Shares