Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

হাত-পা ও মুখ বাঁধা ছবি স্ত্রীকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবী করে কারাগারে ইদ্রিস

কক্সবাজারের পেকুয়ায় হাত-পা ও মুখ বাঁধা ছবি স্ত্রীকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবী করা মোহাম্মদ ইদ্রিসকে (৪২) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে তাকে কক্সবাজারের চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে আদালত এ আদেশ দেন।

ইদ্রিসের বাড়ি পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের সোনাইছড়ির মৌলভীপাড়া এলাকায়।

পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বলেন, অপহরণের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে পুলিশকে হয়রানি, পরিবার ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করায় ৫৪ ধারায় ইদ্রিসকে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

পেকুয়া থানার পুলিশ জানায়, ২৪ জানুয়ারি রাত আটটার দিকে পেকুয়ার টৈটং বাজার থেকে আত্মগোপনে চলে যান ইদ্রিস। এরপর তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে অপহৃত হওয়ার কথা জানান। স্ত্রীকে বলেন, ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। নইলে অপহরণকারীরা তাঁকে মেরে ফেলবে। পরে পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়। পুলিশ প্রথমে ইদ্রিসের মুঠোফোনের সর্বশেষ অবস্থান ধরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। তবে ইদ্রিসের সন্ধান না পেয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ইদ্রিসের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে—এমন একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন। ওই ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীর ছোট বোনের স্বামী নবী হোছেন। নবী হোছেনকে চট্টগ্রাম নগর থেকে আটকের পরে তাঁর সহায়তায় ইদ্রিসের সন্ধান পায় পুলিশ। অপহরণ নাটকের বিষয়টি নবী হোছেনকে আগেই জানিয়েছিলেন ইদ্রিস।

মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পেকুয়া থানার ওসির কক্ষে ইদ্রিস সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তাঁর তিন লাখ টাকার মতো ঋণ রয়েছে। এই টাকা পরিশোধ করার প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া বেশি টাকা আদায় করতে পারলে তা দিয়ে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। ইদ্রিস বলেন, ‘দোকান থেকে রশি কিনে অন্য একজনের সহায়তায় নিজের হাত-পা বেঁধে ছবিটি স্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলাম। ঘটনাটি এত বড় হবে ভাবিনি। এখন আমি অনুতপ্ত।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আট মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে কর্মহীন হয়ে পড়েন ইদ্র্রিস। এরপর ধারকর্জ করে তাঁর সংসার চলছিল। ঋণ বেড়ে যাওয়ায় পাওনাদারেরা তাঁকে চাপ প্রয়োগ করছিলেন। তাই ঋণের টাকা পরিশোধ করে আবারও মালয়েশিয়া ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছিলেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে অপহরণের নাটক সাজিয়ে স্ত্রীকে ইদ্রিস বলেন, ভাইদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মুক্তিপণ পরিশোধের জন্য।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর রাত নয়টার দিকে পেকুয়া চৌমুহনীর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে থেকে পেকুয়া সেন্ট্রাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফকে অপহরণ করা হয়। এরপর অপহরণকারীরা হাত-পা ও চোখ-মুখ বাঁধা ছবি পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ৪০ লাখ মুক্তিপণ দাবি করেন। একপর্যায়ে ১১ অক্টোবর বাড়ির পরিত্যক্ত একটি পুকুর থেকে পায়ে ইট বাঁধা ও বস্তাবন্দী অবস্থায় আরিফের লাশ উদ্ধার হয়। এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে লক্ষ্যে দ্রুত ইদ্রিসকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে পুলিশ।

পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন বলেন, ‘গত তিন দিনের প্রতিটি মুহুর্ত ইদ্রিসকে জীবিত উদ্ধারের একটি স্পৃহা ছিল। যখন সাতকানিয়ার লোকেশেনে তাকে পাইনি, তখন মনে হয়েছে এই বুঝি ইদ্রিসকে মেরে ফেলেছে অপহরণকারীরা। পরবর্তীতে ইদ্রিসকে উদ্ধার করতে পেরে স্বস্তি পেয়েছি।’

0Shares