Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রতিটি গোলাপের দাম তিন টাকা, চাষিদের কপালে ভাঁজ

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দিবসকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলীর গোলাপ বাগানে অন্যান্য দিনের তুলনায় ব্যস্ততা থাকে বেশি। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। নানা কারণে চাহিদা কম থাকায় বাগানেই পড়ে আছে হাজারো গোলাপ। এছাড়া গোলাপের দামও অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক কম। প্রতিটি গোলাপ এখন আড়তদারদের বিক্রি করা হচ্ছে তিন টাকায়।

বাগান মালিকেরা বলছেন, অনির্বাচিত সরকার, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভালোবাসা দিবসে শবে বরাতের দিন হওয়ায় বাজারে গোলাপের চাহিদা নেই। একারণে গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাসের বড় ধরণের দরপতন ঘটেছে।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে বরইতলীর মাইজপাড়া এলাকার গোলাপ বাগানে দেখা যায়, বাগান মালিক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (৪৬) কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে বাগান পরিস্কার করছেন। তাঁর বাগানে কয়েকজন দর্শনার্থী এসেছেন। তাঁরা ছবি-ভিডিও করছেন। আব্দুল্লাহ ৮০ শতক জমিতে গোলাপের চাষ ও ১৬০ শতক জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আমি ৮০ শতক জমিতে গোলাপের চাষ করেছি। চাষও ভালো হয়েছে। কিন্তু আড়তদারদের চাহিদা না থাকায় বুধবার ও বৃহস্পতিবার-দুদিনে গোলাপ বিক্রি করেছি মাত্র দুই হাজার ৯০০টি। তিনি বলেন, প্রতিটি গোলাপের মূল্য বুধবার পাঁচ টাকা, বৃহস্পতিবার তিন টাকায় নেমে এসেছে। অথচ গত বছরের ভালোবাসা দিবসে আমার বাগান থেকে গোলাপ বিক্রি করেছি সাত হাজার। প্রতিটি গোলাপের দামও ছিল ১৪-১৫টাকা করে। বর্তমানে কাটাযোগ্য আরও আড়াই হাজার গোলাপ বাগানে পড়ে রয়েছে। তিনি বাগানের খরচ কিভাবে উঠাবেন সে চিন্তায় পড়েছেন।

আব্দুল্লাহর সুরেই কথা বলেন পাশের বাগানের মালিক রুসিলা বেগম ও শেফায়েত উল্লাহ। তাঁরা জানিয়েছেন, এবারের ভালোবাসা দিবসে শবে বরাতের দিন থাকায় গোলাপের চাহিদা কম। চাহিদা কমে যাওয়ায় দামও কমে গেছে। অথচ এবারের ভালোবাসা দিবসে প্রতিটি বাগান থেকে দুই থেকে ১০ হাজার গোলাপ কাটার প্রস্তুতি ছিল।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বরইতলীর ১০৫ একর জমিতে গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস চাষ হয়েছে। বাগান আছে ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক। এসব বাগানে তিন থেকে চারশত শ্রমিক কাজ করেন।

গোলাপ বাগান মালিক ও চাষিরা বলেন, প্রতিবছর শুধু ভালোবাসা দিবসে বরইতলীর গোলাপ বাগান থেকে চার লাখ গোলাপ বিক্রি হয়। এবারের পরিবেশ ভিন্ন। রাজনৈতিক অস্থিরতা আর শবে বরাতের দিন হওয়ায় এবার বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুইদিনে গোলাপ বিক্রি হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার মতো। শতাধিক গোলাপ বাগানে পড়ে রয়েছে কাটাযোগ্য লাখো গোলাপ।

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুন ও ১৬ ডিসেম্বরে গোলাপের প্রচুর চাহিদা থাকে। ওই সময় প্রতিটি গোলাপ ৮ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বরইতলী ইউনিয়নের উপর পাড়া, নামার পাড়া, খয়রাতি পাড়া, নতুন রাস্তার মাথা, মাইজ পাড়াসহ ১০ থেকে ১২টি গ্রামে গোলাপের চাষ হয়েছে। লাল গোলাপে রঙিন সব কটি বাগান। পাশাপাশি সব বাগানেই কিছু গ্ল্যাডিওলাস চাষ করেছেন চাষিরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বরইতলী পুরাতন রাস্তা মাথায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস আটি বাঁধছেন। আটি বাঁধার পর এসব গোলাপ রাত আটটার দিকে চট্টগ্রামের গাড়িতে তুলে দিবেন।

চকরিয়া গোলাপ বাগান মালিক সমিতি সূত্র জানায়, বরইতলী ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন যেসব গোলাপ ও গ্ল্যাডিওলাস কাটা হয়, এর ৯০ শতাংশ সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী পাহাড় এলাকার ফুলের দোকানগুলোয়। অবশিষ্ট গোলাপ চকরিয়া, কক্সবাজারের বিভিন্ন দোকান ও ঢাকার আড়তগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।

চকরিয়া গোলাপ বাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম বলেন, দুটি কারণে এবার চাষিরা মাঠেই মরে গেছে। প্রথমত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই, দ্বিতীয়ত ভালোবাসা দিবসের দিন শবে বরাত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রতিটি গোলাপের মূল্য তিন টাকায় নেমে এসেছে। প্রতিটি গ্ল্যাডিওলাস বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকায়। অথচ গত বছর এই গ্ল্যাডিওলাস বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ৩০-৩৫ টাকায়।

মঈনুল ইসলাম বলেন, গত বছর ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে চার লাখ গোলাপ ও এক লাখ গ্ল্যাডিওলাস বিক্রি হলেও এবার এক লাখ ১০হাজার গোলাপ ও ৫০হাজার গ্ল্যাডিওলাস বিক্রি হয়েছে। এতে চাষি ও বাগান মালিকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সময় লাগবে বলে জানান।

5Shares