Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সাবেক সংসদ সদস্য জাফরের আইনজীবী অবরুদ্ধ, সেনাবাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের একজন আইনজীবীকে আদালতে দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। পরে ওই আইনজীবী সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় উদ্ধার হন। আজ বুধবার দুপুরে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

আইনজীবীর নাম মো. তৌহিদুল এহেছান।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন বলেন, বুধবার (২১ মে) দুপুর ১২টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে শতাধিক ব্যক্তি জড়ো হয়ে ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও লড়াই করো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে আদালত চত্ত্বরে প্রবেশ করে। এ সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে আইনজীবী তৌহিদুল এহেছান কোর্ট ইন্সপেক্টরের কক্ষে অবস্থান নেন। আদালতের পরিবেশ উত্তপ্ত ও ভীতিকর হয়ে ওঠায় অন্তত দেড় ঘণ্টা ধরে ওই আইনজীবী অবরুদ্ধ থাকার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনীর দুইটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

আদালত চত্ত্বরে চকরিয়া পৌর বিএনপির সদস্য হেলালকে বলতে শোনা যায়, ‘জাফরের জামিন চাইতে এসেছে উকিল এহেসান। সে আমাদের দুর্নাম করতেছে। সে নাকি আমাদের হাতে অনিরাপদ, যার কারণে সে যে অনিরাপদ সেটা দেখানোর জন্য এসেছি।’

আদালত সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার জাফর আলমকে চকরিয়া-পেকুয়া থানার অন্তত ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে গত ১৮ মে স্বশরীরে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই দিন অন্য একটি মামলায় ঢাকার আদালতে নিয়মিত হাজিরা থাকায় জাফর আলমকে চকরিয়া আদালতে আনা হয়নি। তবে সেদিন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে এবং তাঁর শাস্তির দাবিতে অবস্থান নেয়। এতে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

অবরুদ্ধ আইনজীবী তৌহিদুল এহেছান বলেন, আগামী ২৭ মে জাফর আলমের শ্যোন অ্যারেস্ট শুনানির জন্য তাকে স্বশরীরে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এর আগে ১৮ মে আদালত প্রাঙ্গণে একদল লোক মব তৈরি করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। সেই প্রেক্ষিতে আমি জাফর আলমের পক্ষে আদালতে একটি বিশেষ দরখাস্ত করি, যাতে ভবিষ্যতে মব জাস্টিস বা দলগত সংঘাতের আশঙ্কা এড়ানো যায়। আজ দুপুরে তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ (২০২০ সালের ১১ নম্বর আইন) এর ৫ ধারার ক্ষমতাবলে এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতি কর্তৃক জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনার আলোকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনটি শুনানি করা হয়। আদালত বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানান।

তৌহিদুল এহেছান বলেন, ‘শুনানি শেষে আদালতের মুন্সী হেলাল (চকরিয়া পৌর বিএনপির সদস্য) ও স্থানীয় মামুনের নেতৃত্বে আদালত চত্ত্বরে মব তৈরি করে আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাঁরা সাবেক সংসদ সদস‍্য জাফর আলমের পক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহণ করায় আমাকে বিভিন্ন অশালীন ভাষায় আক্রমণ ও হুমকি প্রদান করে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি বিচারকের দৃষ্টিগোচরে আনলে তাঁর নির্দেশে কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টরের কক্ষে আমাকে নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে হেলাল উদ্দিন বলেন, জাফর আলম গত ১৭ বছর আমাদের নির্যাতন করেছেন। তিনি একজন খুনি। এই খুনির পক্ষে চকরিয়ার কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াচ্ছেন না। কক্সবাজার থেকে উকিল এহেসান এসে তাঁর পক্ষে উকালতি করছেন। এতে আমাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। নেতা-কর্মীরা আদালতে জড়ো হন। আমি তাঁদের বুঝিয়েছি, এখানে (আদালতে) কিছু হলে সব দায়ভার আমার ওপর চলে আসবে। আমি তাঁদের সরিয়েছি। তিনি বলেন, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ থেকে এমনটি হয়েছে। এতে আমার ফাঁসি হলে হবে।

জানতে চাইলে চকরিয়া এডভোকেট এসোসিয়েশনের সভাপতি শহীদুল্লাহ্ চৌধুরী বলেন, একজন আসামির বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই আসামির পক্ষে কেউ আদালতে দাঁড়ালে তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা কিংবা মব তৈরি করা দুঃখজনক ঘটনা।

5Shares