
বেঞ্চে দুই পা তুলে ডান পা দিয়ে লেখেন তিনি। কলমে বেশ খানিকটা ভর দিয়ে, কিছুটা ধীরে লিখতে হয়। পা দিয়ে লিখেই শিক্ষাজীবনের প্রতিটি পরীক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছেন। সম্প্রতি এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের দুর্গম জনপদ হরিদাঘোনা এলাকার প্রতিবন্ধী মো. আলী। তার বাবা আমিন শরীফ ও মাতা শামসুন্নাহার।
জন্মগতভাবে দুটি হাত না থাকলেও অদম্য ইচ্ছা আর কঠোর মনোবল দমিয়ে রাখতে পারেনি মো. আলীকে। নিজের স্বপ্ন পূরণে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে পায়ে লিখেই এমবিএ পাশ করেছেন।
তার পড়ালেখা শুরু বড়হাতিয়া শাহ জব্বারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষাজীবন শুরুর গল্পটাও করুণ। কোনো স্কুল তাকে ভর্তি করাতে চায়নি। অবশেষ অনেক বাধা-বিপত্তির পর সেখানে ভর্তি করা হয়। এরপর মাধ্যমিক শিক্ষা বিজি সেনেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক সাতকানিয়া সরকারি কলেজ এবং সর্বশেষ চট্টগ্রাম সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন।
মো. আলীর বাবা ও মায়ের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, আমাদের দুই ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে মো. আলী সবার ছোট। সে জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার দুটি হাত নেই। কিন্তু প্রতিবন্ধী হলেও আমরা তাকে প্রতিবন্ধী মনে করি না। হাত না থাকায় ছোট থেকেই আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। পা দিয়ে লিখলেও তার লেখা অনেক সুন্দর এবং পড়াশোনায় সে খুবই মনোযোগী।
মো. আলীর দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করেন তার মা। তার স্বপ্ন একটি সরকারি চাকরি পাওয়া। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হতে চান। এরই মধ্যে তিনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেছেন। বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করেছেন।
মো. আলী আক্ষেপের সুরে বলেন, অনেক জায়গায় চাকরির আবেদন করি, পড়াশোনা করি, পরীক্ষা দিই। কোনো কোনোটাতে টিকেও যাই। কিন্তু পরে আর ডাকে না। এভাবেই চলছে আমার জীবন।
সাতকানিয়া সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক আব্দুল হামিদ বলেন, মো. আলীর দুটি হাত নেই, তারপরও অনেক সংগ্রাম করে সে পড়াশোনা করেছে। অনেক কষ্ট করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করত। তার বিবিএ ও এমবিএ’র ফলাফল খুবই সন্তোষজনক। এ রকম সংগ্রাম করে পড়াশোনা করা একটি ছেলে দেশের সম্পদ। তার কম্পিউটার জ্ঞান ভালো। একটি সরকারি চাকরি পেলে সে পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারবে। সে দেশের সম্পদে পরিণত হবে-এমনটাই আশা করি আমরা।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মো. আলীর মতো অদম্য ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন ছেলেরা আমাদের গর্ব। এদের ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতা, দায়বদ্ধতা ও ভালোবাসা সব সময় আছে। সে যাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে ব্যাপারে আমরা তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে যাব। কঠোর সংগ্রামী এমন প্রতিবন্ধীদের পাশে থাকা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তার পরিবার একটি আবেদন দিলে সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।





